নরসিংদীর রায়পুরায় নলবাটা খালের বিভিন্ন স্থানে পলিমাটি জমে ভরাট হয়ে গেছে। এতে পানির প্রবাহ না থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন খালপাড়ের কৃষক ও বাসিন্দারা। পানিপ্রবাহ ঠিক রাখতে স্থানীয় লোকজন বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও তা কাজে আসছে না। তবে কর্তৃপক্ষ খাল খননে ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছে।
গতকাল সোমবার সরেজমিনে জানা গেছে, রায়পুরা উপজেলার আমিরগঞ্জ ইউনিয়নের নলবাটা এলাকা দিয়ে খালটি বয়ে গেছে। স্থানীয়রা এটিকে নলবাটা খাল হিসেবে চেনে। ৪০ ফুট চওড়ার এই খাল আড়িয়াল খাঁ নদী থেকে পৌনে দুই কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে করিমগঞ্জের বিলে মিশেছে। খালের বিভিন্ন স্থানে পলি মাটি পড়েছে। আড়িয়াল খাঁ নদী থেকে করিমগঞ্জ বিল পর্যন্ত স্থানীয় লোকজন স্বেচ্ছাশ্রমে খালের মধ্যে ছোট নালার মতো তৈরি করে পানি প্রবাহ ধরে রাখার চেষ্টা করেছেন।
খাল নিয়ে স্থানীয় কৃষক মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বর্মণ, আলতু মিয়া ও অনাথ চন্দ্র বর্মণের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা জানান, খালটি একসময় খরস্রোতা ছিল। এতে নৌকা চলাচল করত। সহজেই বিলের পানি প্রবাহিত হয়ে নদীতে গিয়ে পড়ত। খালটিতে মাছ শিকার, গোসল ও এর পানি দিয়ে চাষাবাদ সহ বিভিন্ন কাজ করা হতো। এখন খালটি খননের অভাবে বিলুপ্তপ্রায়। অনেক সময় সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সহ পানি নিষ্কাশন ভালো না হওয়ায় ফসলি জমি অনাবাদি হয়ে পড়ছে। দ্রুত এই খাল খননে প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানান তাঁরা।
এস এম শরীফ নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘কিছুদিন আগে খালের মধ্যে ছোট নালা তৈরিতে এলাকার মানুষের কাছ থেকে কয়েকজন টাকা তোলেন। সেই টাকা ব্যয়ে এবং অনেকের স্বেচ্ছাশ্রমে পানি প্রবাহের ব্যবস্থা করার জন্য খালটির মধ্যে নালা তৈরি করা হয়। কিন্তু এতেও সুফল মিলছে না।’
আমিরগঞ্জ ইউপির নারী সদস্য খালেদা পারভিন বলেন, ‘১০ বছর ধরে খালটি ব্যবহারের অনুপযোগী। এতে পলি পড়ে ভরাট হয়ে যাওয়ায় ওই দুই পাশের জমির মালিকেরা অবৈধ দখল করছেন, এতে পানি প্রবাহিত হচ্ছে না। খালটি এখন মৃত হয়ে অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে। খালটি খনন করে পানির প্রবাহ ফিরে পেলে উপকৃত হবে কৃষকেরাসহ স্থানীয় লোকজন।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘খোঁজ-খবর নিয়ে জানতে পারি খালটিতে পলি পড়ে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। কৃষকদের সেচ কার্যক্রম কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। সেখানকার কৃষকদের সেচ খরচ বেড়েছে। এতে ফসলের কাঙ্ক্ষিত ফলন পাচ্ছেন না তাঁরা।’
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) রায়পুরা উপজেলা উপসহকারী প্রকৌশলী সঞ্জয় পাল বলেন, ‘খালটির অস্তিত্ব রয়েছে। খালটিতে এখনো কোথাও ১০, ১২ কিংবা ১৪ ফিট প্রস্থ আছে। খাল খনন করতে সেখানে ২৪ ফিট টপ ও নিচে ১০ ফিট লাগবে। স্থানীয়রা যদি সে অনুযায়ী ব্যবস্থা করে দিতে পারেন, তাহলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোজলিন শহিদ চৌধুরী বলেন, ‘খালটি সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখব, খাল খননে সেখানে কৃষক ও মানুষের কতটুকু উপকার হবে। সে অনুযায়ী যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’