শিরোনাম :
এপেক্স ক্লাবস্ অব বাংলাদেশ এর বোর্ড মেম্বারদের ওরিয়েন্টেশন পোগ্রাম অনুষ্ঠিত নরসিংদীতে ফতোয়া বোর্ডের ফিকহী কনফারেন্স অনুষ্ঠিত দ্যা সোসাইটি অব ব্রিটিশ বাংলাদেশি সলিসিটরসের দায়িত্বে গাফ্ফার ও মুনশাদ সরকারী আদিয়াবাদ ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত বাইপাস সড়ক বাতিলের দাবিতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ  নরসিংদীতে ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়ী ও পরিষদে হামলা, নিহত ১ সাংবাদিক মনির হায়দার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন সাত দিনের রিমান্ডে ১০ ছাত্রলীগ নেতা, নরসিংদীতে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাংচুর নরসিংদীতে কৃষক দলের সমাবেশে সন্ত্রাসী হামলায় ৫জন আহত ক্রীড়া সংস্থার ডায়নামিক কমিটির প্রত্যাশায় নরসিংদীবাসী
মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৫:১৪ পূর্বাহ্ন

ষ্টেশন মাষ্টারের ছত্রছায়ায় সকল অপকর্ম : অবৈধ দোকানপাট অপরাধীদের অভয়ারণ্য নরসিংদী রেলস্টেশন

মাইনউদ্দিন সরকার / ৯৪ বার
আপডেট : রবিবার, ১৯ জানুয়ারী, ২০২৫

নরসিংদী রেলস্টেশনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে রেললাইনসহ প্লাটফর্মে অবৈধ দোকানপাট বসিয়ে মাসোহারা আদায় এবং চোর,ছিনতাইকারীদের প্রশ্রয়ের অভিযোগ উঠেছে ষ্টেশন মাষ্টার এটিএম মুসা’র বিরুদ্ধে।
রেললাইনের উপর দোকানপাট বসানোর কারনে যাত্রী সাধারণের চলাফেরায় ব্যঘাতসহ যে কোন সময় বড় ধরনের দূর্ঘটনার আশংকায় নরসিংদীবাসী। অপরদিকে সন্ধ্যার পর ষ্টেশনের প্লাটফর্ম ও আউটারে চোর ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে স্বর্বশান্ত হওয়ার ঘটনাও ঘটছে অহরহ। রাত গভীর হলে ষ্টেশনের ভিআইপি বিশ্রামাগারে মাঝে মধ্যেই বসে মাদকের আসর।


ষ্টেশন মাষ্টার এটিএম মুসা স্থানীয় হওয়ায় প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নিকটাত্মীয় পরিচয় দিয়ে এসব অপকর্মে লিপ্ত থাকেন। তার এসব কর্মকাণ্ডের কারনে খোদ রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনির সদস্যরাই নিরাপত্তা ঝুকিতে থাকেন বলে জানাযায়। এটিএম মুসা রেলওয়ে কর্মকর্তা কর্মচারী ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নেতা হওয়ার সুবাদে আরশীনগর সিগন্যাল গেটের পাশে নিজেই রেলওয়ের জমি দখল করে নির্মাণ করেছেন বিশাল মার্কেট। বহুরূপী মুসা বিগত স্বৈরাচারী সরকারের আমলে আওয়ামী লীগ নেতার নিকটাত্মীয় পরিচয়ে ৩য় গ্রেডের মাষ্টার হয়েও নরসিংদী রেলস্টেশনের ১ম গ্রেডের পদের দায়িত্ব বাগিয়ে নেন। ৫ আগষ্ট বিপ্লবের পর বোল পাল্টে হয়ে যান বিএনপি নেতার নিকটাত্মীয়।
রেলস্টেশনে অবৈধ দোকানপাট ও অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিনত হওয়ার বিষয়ে স্টেশন মাষ্টার ও রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনি একে অপরের দোষারোপ করছেন।
সরেজমিনে নরসিংদী রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা যায় প্লাটফর্ম ও ৪,৫নং রেললাইনের উপর যেন হাট বাজার বসেছে। অস্থায়ী দোকানপাটের কারনে যাত্রী ও সাধারণ মানুষের চলাচলে ব্যঘাতসহ যে কোন সময় বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটতে পারে।
নরসিংদী থেকে রেলপথে প্রতিদিন ঢাকায় যাতায়াতকারী চাকুরীজিবী মনির হোসেন জানান, সড়ক পথে যানযট ও বিভিন্ন ভোগান্তির কারনে নরসিংদী জেলাবাসী দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাতায়াতের জন্য রেলপথে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। তাই নরসিংদী রেলস্টেশনে যাত্রীদের অনেক ভীড় হয়। কিন্তু প্লাটফর্মে হকার ও অস্থায়ী দোকানপাটের কারনে যাত্রীদের সমস্যা হয়। মাঝে মধ্যে যাত্রীরা গাড়ীতে উঠতে পারেন না, গাড়ী মিস করে ভোগান্তির শিকার হন। মাঝে মধ্যে রেলওয়ের উর্ধতন কর্মকর্তারা পরিদর্শন বা রেলপথে যাতায়াতের খবর পেলেই স্টেশন একদম পরিষ্কার ফকফকা হয়ে যায়। উর্ধতন কর্মকর্তারা চলে যাওয়ার পর আবার যে লাউ সেই কদু হয়ে যায়। আমরা এর থেকে পরিত্রাণ চাই।
নরসিংদী সরকারী কলেজের ছাত্র শরীফুল ইসলাম জানান, আমাদের নরসিংদী শহরটাকে দু’ভাগে বিভক্ত করেছে রেললাইন। রেললাইনের একপাশে মুল শহর অপরপাশে স্টেশনের কাছাকাছি জেলার নামকরা দুটি স্কুলসহ একাধিক কলেজ রয়েছে। রেল সিগন্যাল ও যানজটের কারণে আমরা শিক্ষার্থীরা স্টেশনের পকেট গেট ব্যবহার করে যাতায়াত করি। কিন্তু রেললাইন ও প্লাটফর্ম দখল করে দোকানপাটের কারনে চলাচল করতে সমস্যা হয়। এসব দোকানপাটের কারনে বখাটে ছেলেদের আড্ডা জমে। মেয়ে শিক্ষার্থীরা মাঝে মধ্যে ইভটিজারদের শিকার হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্টেশন এলাকার একজন ব্যবসায়ী জানান, রাত যত গভীর হতে থাকে, স্টেশনের আশপাশে তত ভয়ংকর হতে থাকে। আর হবেইনা কেন? স্টেশনের ভিতর যদি মাদকের আসর বসে, স্টেশন মাষ্টার ও নিরাপত্তা বাহিনি কি করে? স্টেশন মাষ্টার রেলের জায়গায় রেলের মালামাল ব্যবহার করে বিশাল মার্কেট তৈরী করেছেন, তাই এলাকার বখাটেদের তিনি বিশেষ সুবিধা দিয়ে থাকেন বলে শুনেছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে, স্টেশন মাষ্টার এটিএম মুসা নিজেকে একজন রাজনৈতিক ব্যক্তির ভাই পরিচয় দিয়ে বলেন,স্টেশনে ২৬ টি দোকানের বৈধ অনুমোদন আছে। বাকি অবৈধ দোকানগুলো বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ছত্রছায়ায় পরিচালিত হয়। এগুলোকে উঠানোর জন্য রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনিকে চিঠি দিয়েছি। তারা কোন পদক্ষেপ নেয় না।
ভিআইপি বিশ্রামাগারে মাদকের আসর ও রেলের জায়গায় মার্কেট বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রেল ষ্টেটের ৮০ বাই ২০ ফুট কৃষি জমি আমার নামে লীজ নিয়ে, আমি বানিজ্যিক বানিয়ে মার্কেট করেছি। আর ভিআইপি বিশ্রামাগারে স্থানীয় ছেলেরা রাজনৈতিক পরিচয়ে বসতে চাইলে না করতে পারিনা।
তবে মার্কেট নির্মাণে ৮০ ফুটের বেশি দখল ও রেলের মালামাল ব্যবহারের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করে বলেন, এসব মিথ্যা কথা।
এদিকে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনি নরসিংদীর ইনচার্জ উপপরিদর্শক জহুরুল ইসলাম বলেন, স্টেশন মাষ্টার এটিএম মুসা চোরকে বলেন চুরি করতে আর গৃহস্থকে বলেন সজাগ থাকতে। অবৈধ দোকানপাট তুলতে আমাদের চিঠি দিয়ে বলেন উচ্ছেদ করতে আর দখলদারকে বলেন না উঠতে। আমরা উচ্ছেদ করতে গেলে তারা বলেন, মাষ্টারকে নিয়ে আসুন। মাষ্টারকে আমাদের সাথে সহযোগিতা করার জন্য ডাকলে আসেন না। এলাকার চিহ্নিত অপরাধীদের তিনি বিশ্রামাগার খুলে দেন আড্ডা দেওয়ার জন্য। আমরা যদি সেসব অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাই, তখন আমরা নিজেরাই থাকি নিরাপত্তা হুমকিতে। কারন আমাদেরকেও বাইরে চলাফেরা করতে হয়। স্টেশন মাষ্টারের সঠিক সহযোগিতা পেলে একদিনেই সবকিছু নির্মূল করা সম্ভব।

Facebook Comments Box


এ জাতীয় আরো সংবাদ