নরসিংদী স্বাস্থ্য বিভাগে যত সরকারী হাসপাতাল আছে তার অধিকাংশ নিয়ন্ত্রন করেন নরসিংদী জেলা সদর হাসপাতালের প্রধান সহকারী মুনসুর আহমেদ। নরসিংদী জেলার প্রাক্তন সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ নূরুল ইসলাম তার পৃষ্ঠপুষক ছিলেন। জানা যায় সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ নূরুল ইসলাম নরসিংদী জেলায় যোগদান করিয়া ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে নরসিংদী জেলা সদর হাসপাতালে ঔষধপত্রসহ ৬টি গ্রুপে এমএসআর মালামাল ক্রয়, রোগীদের খাদ্য ও পথ্য, ধোলাই, ষ্টেশনারী এবং লাইন ডাইরেক্টর, হসপিটাল সার্ভিসেস ম্যানেজমেন্ট কর্তৃক বরাদ্দকৃত অর্থ দ্বারা কোটেশনের মাধ্যমে বিভিন্ন মালামাল ক্রয়ের জন্য পছন্দের ঠিকাদার নিয়োগ করে অর্থ লোপাট করা যায় সে লক্ষ্যে একজন কর্মচারী খুঁজেন। সদর হাসপাতালে দাপ্তরিক ভাবে টেন্ডার কার্য পরিচালনা করেন হাসপাতালের প্রধান সহকারী। ঐসময় নরসিংদী সদর হাসপাতালে প্রধান সহকারী পদে নিয়োজিত ছিলেন দেওয়ান আলী নামক একজন কর্মচারী। এই কর্মচারী চাকুরী ক্ষেত্রে অত্যান্ত সৎ ও নিষ্ঠাবান হওয়ায় তাকে দিয়ে বেআইনি কাজ করা যাবে না বিধায় সিভিল সার্জন কোন কারন ছাড়া দেওয়ান আলীকে সদর হাসপাতাল হতে নরসিংদী সিভিল সার্জন অফিসে হিসাব রক্ষক পদে বদলী করেন এবং সিভিল সার্জন অফিসের দুর্নীতিবাজ হিসাব রক্ষক মুনসুর আহমেদকে নরসিংদী জেলা সদর হাসপাতালের প্রধান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক পদে পদায়ন করেন। মুনসুর আহমেদ ০৭/০৭/২০২১খ্রিঃ তারিখে সদর হাসপাতালে যোগদান করেই তার স্ত্রীর নামে করা ‘‘ মেসার্স তাহিরা এন্টারপ্রাইজ নামে ’’ প্রতিষ্ঠানকে ২০২১-২০২২ অর্থ বৎসরে সদর হাসপাতালের ধোলাই ও ষ্টেশনারী ঠিকাদারী দেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হসপিটাল সার্ভিসেস মেনেজমেন্ট এর লাইন ডাইরেক্টর থেকে যত টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে তার সমুদয় অর্থ বিভিন্ন কোটেশন দরপত্র দেখিয়ে মুনসুরের ন্ত্রীর নামে করা প্রতিষ্ঠান তাহিরা এন্টারপ্রাইজ এর নামেই কার্যাদেশ নেন। একই অর্থ বৎসরে নরসিংদী স্বাস্থ্য বিভাগের আরেক প্রতিষ্ঠান পলাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রোগীর পথ্য, ধোলাই এবং ষ্টেশনারী মালামাল সরবরাহের ঠিকাদারীও তাহিরা এন্টারপ্রাইজ এর নামে নেন। নরসিংদী সদর হাসপাতালের ধোলাই এবং ষ্টেশনারী মালামাল সরবরাহের বিল ছাড়াই তাহিরা এন্টারপ্রাইজকে ৩১,৪০,৪৪৬/-টাকা এবং সিভিল সার্জন অফিসে কোটেশন করে ১২,৭৬,৯০০/ মোট=৪৪,১৭,৩৪৬/-টাকার কার্যাদেশ দেয়া হয়। উল্লেখ্য যে কোন কর্মচারী সরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকলে এবং সরাসরি টেন্ডার কার্যক্রমের সাথে জড়িত থাকলে তিনি বা তার পরিবারের কেউ ঐ প্রতিষ্ঠানে টেন্ডার প্রদান করতে পারবেন না। মুনসুর আহমেদের এরূপ কর্মকান্ড শাস্তিযোগ্য অপরাধ। মুনসুর আহমেদ জেলা সদর হাসপাতালের উল্লিখিত দরপত্র ও কোটেশনসমূহ তার নিজের প্রতিষ্ঠান মেসার্স তাহিরা এন্টারপ্রাইজ এর নামে বাগিয়ে নিয়েই ক্ষান্ত হননি, তার অলিখিত ব্যবসায়িক পার্টনার মেসার্স ইলেকট্রো সাইন্স নামক একটি ভুয়া প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে ২০২১-২০২২ অর্থ বৎসরে জেলা সদর হাসপাতালের ঔষধপত্র, যন্ত্রপাতি, গজ বেন্ডজ তুলাসহ মোট ছয়টি গ্রুপের এমএসআর মালামাল ক্রয়ের কার্যাদেশ বাগিয়ে নেন। জানা গেছে ২০২১-২০২২ অর্থ বৎসরে নরসিংদী জেলা সদর হাসপাতালের ৬টি গ্রুপে এমএসআর মালামাল ক্রয়ের জন্য দরপত্র দাতার যোগ্যতার যে শর্ত প্রদান করা হয়েছিল ইলেকট্রো সাইন্স এর সে যোগ্যতা না থাকা সত্বেও যোগ্য দরপত্র দাতাদের বাদ দিয়ে মুনসুর আহমেদের প্ররোচনায় ইলেকট্রো সাইন্সকে এককভাবে সমদয় কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে যার পরিমান ৭,০১,৮৯,২৮২/-টাকা। তাছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে লাইন ডাইরেক্টর, হসপিটাল সার্ভিসেস ম্যানেজমেন্ট থেকে এমএসআর মালামাল ক্রয়ের জন্য যে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে উক্ত বরাদ্দের অর্থ দিয়ে এমএসআর মালামাল ক্রয়ের জন্য ইলেকট্রো সাইন্সকে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে যা ১২ কোটি টাকা বলে জানা যায়। ২০২১-২০২২ অর্থ বৎসরে নরসিংদী জেলা সদর হাসপাতালে ঔষধপত্র ক্রয়ের জন্য যে দরপত্র বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে তার দরপত্র সিডিউলের ২৮ নম্বর পাতায় ঠিকাদারের যোগ্যতা চাওয়া হয়েছে দরপত্র বিজ্ঞপ্তি জারীর পিছনের ০৫(পাঁচ) বৎসরের ঔষধপত্র সরবরাহের অভিজ্ঞতা এবং এ অভিজ্ঞতা হতে হবে নূন্যতম ১০০ শয্যা বিশিষ্ট সরকারী হাসপাতালের। সে হিসেবে দরপত্র দাতাকে ২০১৬-২০১৭ অর্থ বৎসর হতে ২০২০-২০২১ অর্থ বৎসর পর্যন্ত নূন্যতম ১০০ শয্যার সরকারী হাসপাতালে ঔষধপত্র সরবরাহের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। কিন্তু কার্যাদেশ পাওয়া প্রতিষ্ঠান মেসার্স ইলেকট্রো সাইন্স এ ব্যবসা করার জন্য ২০১৯ সালে ট্রেড লাইসেন্স করেছেন এবং ২০২০ সালে ড্রাগ লাইসেন্স করেছেন। জানা গেছে হাসপাতালের প্রধান সহকারী মুনসুর আহমেদ এবং সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ নূরুল ইসলাম উভয়ে যোগসাজসে ইলেকট্রো সাইন্স এর ট্রেড লাইসেন্স এবং ড্রাগ লাইসেন্স টেম্পারিং করে এ প্রতিষ্ঠানকে সফল দরপত্র দাতা নিযুক্ত করেছে, যা তদন্ত করলেই ভুয়া প্রমানিত হবে এবং দায়ী ব্যাক্তিরাও চিহ্নিত হবে। জেলা সদর হাসপাতালের প্রধান সহকারী মুনসুর আহমেদের এরূপ স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে নরসিংদী স্বাস্থ্য বিভাগের টেন্ডার বাণিজ্য রোধ করতে তাকে জরুরী ভিত্তিতে নরসিংদী জেলার বাহিরে অন্যত্র বদলী করে টেন্ডার সংক্রান্ত অনিয়ম তদন্ত পূর্বক দায়ী ব্যাক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য এলাকাবাসী উর্দ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবী জানাচ্ছে। (নরসিংদী সদর হাসপাতালের সকল কেনাকাটার ঠিকাদার হাসপাতালের প্রধান সহকারী মুনসুর আহমেদ। বিস্তারীত আসছে আগামী সংখ্যায়..)