ছাগলকাণ্ডে আলোচিত রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমানের প্রথম স্ত্রী ও নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লায়লা কানিজ লাকির খোঁজ মিলছে না। এমন খবরে পুরো জেলা জুড়ে যখন গুঞ্জন চলছিল ঠিক সে মূহুর্তে তার অনুসারী ও রায়পুরার কিছু সাংবাদিকদের পরামর্শে তিনি দীর্ঘদিন পর রায়পুরা আসেন বলে জানা যায়।
সম্প্রতি, মতিউর রহমান গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ইফাত নামে আমার কোনো ছেলে নেই। এমনকি আত্মীয় বা পরিচিতও নন। আমার একমাত্র ছেলের নাম তৌফিকুর রহমান। একটি গোষ্ঠী আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে। সামাজিক মাধ্যমে আমার ছবি ও নাম ব্যবহার করায় আমি বিব্রত। আমি অবশ্যই আইনি পদক্ষেপে যাব। তাঁর এ হুংকারে সাংবাদিকরা পিছু না হটে আরও গভীর ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে লাকি-মতিউর দম্পতির দূর্নীতির প্রতিবেদন প্রকাশ করতে থাকেন। তাদের দূর্নীতির খবর যখন সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে তখন আত্মগোপনে চলে যান উপজেলা চেয়ারম্যান লাকি। এ নিয়ে একাধিক ইলেকট্রনিকস ও প্রিন্ট মিডিয়া সংবাদ প্রকাশ করেন। এসব খবরে টনকনড়ে দুদকের। এসব ঘটনা সরকারের নজরে আসলে লাকির স্বামী মতিউর রহমানকে কাস্টমস, এক্সসাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট পদ থেকে প্রত্যাহার করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত করেন। একই সঙ্গে তাকে সোনালী ব্যাংকের পরিচালক পদ থেকেও অপসারণ করা হয়। গত ৩০ জুন রবিবার লাকি-মতিউর দম্পতির সম্পদের তথ্য চেয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার সাব রেজিস্ট্রি অফিসে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এছাড়াও দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে মতিউর রহমান, তার স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকি এবং ছেলে আহম্মেদ তৌফিকুর রহমান অর্নবের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। তাঁর এইসব দূর্নীতির খবর ঢালাওভাবে প্রকাশিত হলে পুরো জেলা জুড়ে চলে আলোচনা সমালোচনার ঝড়। এনিয়ে তাঁর নির্বাচনী এলাকা (রায়পুরা) মানুষের মাঝে চলে গুঞ্জন। এসব গুঞ্জন ঢাকতে এবং তাঁর বিরুদ্ধে প্রকাশ হওয়া দূর্নীতি খবর আড়াল করতে তিনি কৌশল অবলম্বন করেন। সম্প্রতি তিনি তাঁর অনুসারী ও রায়পুরার কিছু ইউপি চেয়ারম্যান দিয়ে তাঁর গুণকীর্তন লিখে ছবিসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেন। বিশ্বস্ত ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, লাকির কিছু অনুসারী ও স্থানীয় প্রতিনিধির আশ্বাসে ১৪ দিন পর গত ২৭ জুন বৃহস্পতিবার সকালে অনেকটা আত্ম অহংকার আর দাম্ভিকতা নিয়েই উপজেলা পরিষদে আসেন তিনি। এসময় তিনি দুটি প্রস্তুতি সভায় অংশ নেনে। এসময় সভা কক্ষে সাংবাদিকদের ঢুকার নিষেধাজ্ঞা ছিলো বলেও জানান। মিটিং শেষে কয়েকশত অনুসারী নিয়ে বাইরে বের হলে সাংবাদিকদের সঙ্গে কোন কথা বলেনি লায়লা কানিজ লাকী। সাংবাদিকরা তাঁর সাথে কথা বলার চেষ্টা করলে তিনি না-কি এসময় সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, পাছে লোক কত কিছুই বলবে। তাতে আমার কোন কিছু আসবে, যাবে না। জাতীয় পত্রিকা ও টিভির বড় বড় সাংবাদিকসহ রায়পুরার সাংবাদিকদের কিনেই নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা পরিষদে এসেছি। এসময় রায়পুরা সহ স্থানীয় সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন বলেও জানা যায়।
এ পরিস্থিতিতে উপজেলা চেয়ারম্যান লায়লা কানিজ লাকি কেন রায়পুরা আসলেন তা জানতে চাইলে , স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি এই প্রতিনিধিকে জানান, আমরা টিভি ও পেপার-পত্রিকায় লাকির দূর্নীতি খবর প্রথম জানতে পেরেছি। লাকির এতসব সম্পদ ও টাকার খবর আমরা আগে জানতাম না। এখন সাংবাদিকদের মাধ্যমে এসব দূর্নীতির খবর জানলাম। লাকিকে খুশি রাখতে এবং মানুষের কাছে লাকির দূর্নীতি আড়াল করতে রায়পুরার কিছু সাংবাদিক ও ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা তাঁর পক্ষে সুনাম গেয়ে ফেসবুকে প্রচার করছেন। দুই/তিনটা চাটুকারি লোক তাঁর পক্ষে ফেসবুকে সাফাই গাচ্ছেন। এতে আবার যোগ হয়েছে আমাদের রায়পুরার কিছু সাংবাদিক। লাকি যদি কোনো অপরাধ না করে থাকে তাহলে হেরে বিদেশ যাইতে বাঁধা দিলো কেন? আর সে এতদিন আত্মগোপনে থাকবো কেন? লাকি যদি অপরাধ না করে তাহলে তার বিরুদ্ধে এত এত খবর কই থাইক্যা আসলো? লাকি দূর্নীতির সাথে জড়িত না থাকে, তাবে তার পক্ষে একটা খবরও তো পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ করলো না। মূল কথা হলো তাঁর এসব দূর্নীতি মানুষের কাছ থেকে আড়াল করতেই তাঁর অনুসারীদের পরামর্শে ওইদিন তিনি রায়পুরা এসেছিলেন বলে মনে করি।