দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র সংগ্রামের পর বাঙালী জাতির ভাগ্যকাশে দেখা দিল নতুন উদিয়মান এক সূর্য। শুত্রুমুক্ত হলো ১৯৭১ সালের ১৬ ই ডিসেম্বর। বাঙালী জাতি ফিরে পেল বিজয় আনন্দ। আর এ বিজয়ের মাধ্যেমে আমাদের বেদনা অশ্রুসিক্ত হলো আনন্দ মিশ্রত।
১৯৭১ সালের ১৬ ই ডিসেম্বর এর আগেই মুক্ত হয়ে ছিল প্রায় ১৬ টি অঞ্চল। তার মধ্যে ১২ ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সাল মুক্তি পায় নরসিংদী তৎকালিন থানা শহর বর্তমান জেলা শহর নরসিংদী। পাকহানাদের নির্মম অত্যাচারের হাত থেকে মুক্তি পেলেও মুক্তিযোদ্ধা ও জনসাধারনের মাঝে ছিল চরম আতংক। অপেক্ষার প্রহর গুণছিল কবে শেষ হবে সশস্ত্র এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। ১৬ ই ডিসেম্বর পর্যন্ত কাটে চরম উত্তেজনা উদ্বেগের মাঝে। ১২ ই ডিসেম্বর নরসিংদী শহর পাকহানাদার মুক্তদিবস। এইদিনটি জেলার প্রতিটি মুক্তিকামী মানুষের মাঝে চির স্বরণীয় হয়ে থাকবে। জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রায় ছোটবড় অর্ধশতাধিক গেরিলা যুদ্ধ ও খন্ড যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এছাড়াও কয়েকটি মাঝারী আকারের যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের এই দিনে ভারতিয় মিত্র বাহীনি ও মুক্তি বাহীনির সম্মিলিত সহযোগীতায় মুক্ত হয় নরসিংদী। ভরতীয় মিত্র বাহিনী ও মুক্তিবাহীনি আকাশ জল ও স্থল পথে সম্মিলিত আক্রমন চালিয়ে তৎকালিন নরসিংদী শহরকে হানাদার মুক্ত করে। আর এ বিজয়ের একদিকে যেমন ছিল আনন্দের, তেমনি অন্যদিকে ছিল কারো মা হরা বোন হারা আবর কারো ছেলে হারা স্বামী হারার বুক ফাঁটা আর্তনাধ। তারপরও সব বেদনাকে ভুলে বিজয়ের চাদরে মুড়িয়ে নিল নরসিংদী মুক্তিকামি লাখো জনতা।
১৯৭১ সালের এই দিনটি নরসিংদীর আপামোর জনগণের কাছে একটি চির স্বরণীয় দিন যা নরসিংদীবাসী কখনো ভুলতে পারবেনা। মুক্তিযেুদ্ধের প্রথম দিকে নরসিংদী ছিল ২ নং সেক্টরের অধিনস্ত তখন সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর জেনারেল শফিউল্লা পরে নরসিংদী জেলাকে ৩ নং সেক্টরে রুপান্তরিত করা হলো। তখন সেক্টর কমান্ডার ছিলেন ব্রিগেডিয়ার মো: নুরুজ্জামান।
দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা। ২৫ মার্চ কালো রাতে যখন পাকহানদার (বর্বর) বাহিনী বাঙালী জাতির উপর সশস্ত্র আক্রমণ চালায় তার পরদিন ২৬ শে মার্চ যুবক শ্রমিক ছাত্র রাজনীতিবিদ ও সর্বস্থরের মানুষ পকাহানাদার (বর্বর)দের প্রতিরোধে সংঘবদ্ধ হয়ে দূর্বার আন্দোলন গড়ে তোলে । আর নরসিংদীতে তৎকালিন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের চেয়ারম্যান মেজর (অব) সামছুল হুদা বাচ্চুর নেতৃত্ব ছত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা বর্বদের (পাকহানাদের) উপর গড়ে তোলে প্রতিরোধ।
১৯৭১ সালে দীর্ঘ ৯ মাস নরসিংদী জেলার বিভিন্ন স্থানে শতাধিক খন্ড যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ওই যুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্মমতার শিকার হয়ে শহীদ হন ১১৬ জন বীর সন্তান। এরমধ্যে নরসিংদী সদরের ২৭, মনোহরদীর ১২, পলাশে ১১, শিবপুরের ১৩, রায়পুরায় ৩৭ ও বেলাব উপজেলার ১৬ জন।
মুক্ত দিবসের এ দিনে সকল শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জানাচ্ছি বিনম্র শ্রদ্ধা।