দ্রব্য মূল্যের উর্ধগতি, মানুষ আজ অসহায়। বাজারের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে তারা। আজ যে পন্যের দাম দেখে গেছেন কাল কিনতে গিয়ে দেখেন কেজিতে বেড়ে গেছে দশ থেকে বিশ টাকা। এমন অবস্থায় কোনো রকমে দিন কাটছে তাদের। শ্রমজীবী মানুষেরা হাপিত্যেশ করছে । নিত্যপণ্যের এমন গতির লড়াইয়ে মানুষ যাবে কোথায়? হাতে সীমিত টাকা নিয়ে বাজারে গিয়ে অনেক প্রয়োজনীয় পণ্য না কিনেই ফিরতে হচ্ছে তাদের। ঘরে ঘরে করুন অবস্থা। সাধারণ মানুষদের কথা, আমরা যাবো কোথায়? কার কাছে এর সুরাহা চাইবো? সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে পিয়াজ, আলু, সবজিসহ বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য নেই। বাজার ব্যবস্থায় কর্তৃপক্ষের কোন নজরদারি নেই। যার যেমন খুশি সেভাবেই বিক্রি করছে। বিক্রেতারা ও অসহায়। তাদের কথা এত দামে পণ্য বিক্রি করতে আমাদেরও বিবেকে বাধে। কিন্তু করবো কী? আমাদেরও যে বেশি দামে কিনে আনতে হয়। বিক্রেতাদের কথা বাজারে পণ্যের অভাব নেই। কিন্তু দাম কমছে না। এমন পরিস্থিতি আর কখনোই দেখিনি।
সরজমিন নরসিংদির বিভিন্ন বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বাজারটিতে এক কেজি দেশি পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা দরে। আলু ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি। রসুনের কেজি ২৮০, আদা ২৪০ টাকা। ডিম ৫৫ টাকা হালি। শিম ১৬০ টাকা, পটোল ৬০ টাকা, শসা ৬০ টাকা, টমেটো ১২০ টাকা, ঊসি ৬০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, কচুমুখি ৮০ টাকা, ফুলকপি ৬০ থেকে ৭০ টাকা পিস, বাঁধাকপি ৫০ থেকে ৬০ টাকা পিস, মিষ্টি কুমড়া ৬০ টাকা কেজি, পেঁপে ৪০ টাকা, করলা ১০০ টাকা, বেগুন ১০০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। শীতের মৌসুম শুরু হলে ও এক আঁটি লালশাক বিক্রি হচ্ছে ৩০টাকা। পালংশাক-মূলাশাক ও ২০ টাকা আঁটি বলে একদাম হাঁকাচ্ছেন বিক্রেতারা। ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি। সোনালি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি।
তরিকুল ইসলাম নামে এক বেসরকারি ব্যাংক কর্মচারী বলেন, অর্থনীতির ভাষায়- কোনো জিনিসের জোগান সীমিত থাকলে তার দাম বাড়তে পারে। কিন্তু আমাদের বাজারে সকল পণ্যের জোগান পর্যাপ্ত রয়েছে। কোনো কিছুর সংকট নেই। টাকা হলে সবই পাওয়া যাচ্ছে। তবুও দাম বেড়েই চলেছে। মূলত বাজার ব্যবস্থায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো সঠিক নজরদারি নেই। আর এরই সুযোগে কিছু অসাধু মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ী যেমন খুশি মুনাফা লুটছেন। একদিকে কৃষক তাদের পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। অপরদিকে আমরা ক্রেতারা অতিরিক্ত দাম দিয়ে পণ্য কিনছি। তিনি বলেন, সিন্ডিকেটের সদস্যরা এতই ক্ষমতাধর যে সরকারও তাদের কিছু করতে পারছে না।
তবে বাচ্চু মিয়া, মো. লতিফ সহ বেশ কিছু খুচরা বিক্রেতা বলেছেন, আমরা যেই দামে পাইকারি বাজার থেকে পণ্য কিনি, সেই দামের সঙ্গে পরিবহন, দোকান ভাড়া সহ বিভিন্ন খরচ যুক্ত করে বিক্রি করি। এখানে আমাদের কোনো কারসাজি নেই। তারা বলেন, আমাদেরও পরিবার-পরিজন নিয়ে বাস করতে হয়। সংসারের খরচ আছে। মানুষ এখন দুই কেজির জায়গায় আধা কেজি করে পণ্য কিনছেন। বর্তমান বাজারে ব্যবসা করে দুই পয়সা কামাই করতে আমাদের ও ঘাম ছুটে যাচ্ছে।