চেতনা রিপোর্ট: বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পের কর্মযজ্ঞ। দেশজুড়ে প্রতিযোগিতা জিডিপির ঊর্ধ্বগতি। উন্নয়নের এক মহাসড়কে হাঁটছে বাংলাদেশ। আর এই স্বপ্নজালের আড়ালে লুকিয়ে আছে, কর্মসংস্থানহীনতার মতো এক গভীর সংকট। প্রতি বছর চাকরির বাজারে প্রবেশ করছে, লক্ষ লক্ষ শিক্ষিত তরুণ। কিন্তু তাদের জীবনে মিলছে না, পর্যাপ্ত চাকুরির সুযোগ। কেন কর্মহীন এই বিশাল কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী? স্বাধীনতার পাঁচ দশক পেরিয়ে গেলেও, আজও উত্তর মেলেনি এই প্রশ্নের।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো এর তথ্য মতে, দেশে আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে যুব বেকারত্বের হার। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, স্নাতকোত্তর শেষ করেও শত শত আবেদন আর কয়েক ডজন ভাইভা দিয়েও মিলছে না একটি চাকুরি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী তরুণ জানান, মাস্টার্স শেষ করেও দুই বছর ধরে বেকার। তাকাতে লজ্জা হয়, বাবা-মায়ের দিকে। এড়িয়ে চলতে হয় বন্ধুদের। আজ মনে হচ্ছে বৃথা সব পরিশ্রম।
এই সংকট কেবল ব্যক্তিগত হতাশার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। বিশ্লেষকরা ‘টাইম বোমা’-র সাথে তুলনা করছেন বিষয়টিকে। কর্মহীনতা জন্ম দিচ্ছে সামাজিক অস্থিরতা, বাড়িয়ে তুলছে চুরি, ছিনতাই ও কিশোর গ্যাং-এর মতো অপরাধমূলক কার্যকলাপ। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য মতে, সাম্প্রতিক অপরাধে জড়িতদের একটা বড় অংশই শিক্ষিত বেকার ও কর্মহীন।
কর্মসংস্থানের এই সংকট ও সরকারি চাকুরিতে বৈষম্যের ইস্যুগুলোই দানা বাঁধে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে’ বিগত বছর। যা পরবর্তীতে সরকারের পতনকে ত্বরান্বিত করে। এই ঘটনা প্রমাণ করে, তরুণদের কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা দিতে না পারলে, ভঙ্গুর হতে পারে যে কোনো উন্নয়ন।
প্রশ্ন হলো, উন্নয়নের ঝকমকে ছবির আড়ালে হারিয়ে যাওয়া এই তরুণদের দায়িত্ব কার? আগামীর বাংলাদেশের স্থপতি এই তরুণদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে না পারলে, অর্থহীন হয়ে পড়বে যে কোনো অর্জন। এখনই দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে, কর্মহীনতার এই আগুন হয়তো গ্রাস করতে পারে আমাদের সামাজিক স্থিতিশীলতাকেই। এমনটাই দাবি সচেতন মহলের।