বাংলাদেশ পুলিশের ইতিহাসে সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল সময় হল ১৯৭১ সাল। মহান মুক্তিযুদ্ধে একজন ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল, বেশ কয়েকজন এসপি সহ প্রায় সকল পর্যায়ের পুলিশ সদস্য বাঙ্গালীর মুক্তির সংগ্রামে জীবনদান করেন। ১৯৭১ সালের মার্চ মাস হতেই প্রদেশের পুলিশ বাহিনীর উপর কর্তৃত্ব হারিয়েছিল পাকিস্তান সরকার। পুলিশের বীর সদস্যরা প্রকাশ্যেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তারা ২৫ শে মার্চ ১৯৭১ তারিখে ঢাকার রাজারবাগের পুলিশ লাইন্সে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন বাংলাদেশ পুলিশের গর্বিত সদস্যরা। এই সশস্ত্র প্রতিরোধটিই বাঙ্গালীদের কাছে প্রথম সশস্ত্র যুদ্ধ শুরুর বার্তা পৌছে দেয়। পরবর্তীতে পুলিশের এই সদস্যরা ৯ মাস ব্যাপী দেশজুড়ে গেরিলা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।
পরবর্তীতে দেশ স্বাধীনতা লাভ করার পর, শান্তি, শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা, প্রগতি এই চারটি আদর্শকে সামনে নিয়ে গঠিত বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী দীর্ঘ ৫৩ বছর ধরে বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাতকে পিছনে ফেলে দেশ গড়া এবং দেশ গঠনে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে।
পুলিশ জনগণের বন্ধু। এই শ্লোগান কে বিশ্বাস করে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা এবং চিহ্নিত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশ বদ্ধপরিকর।
কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের হলেও সত্য হলো বিভিন্ন সময় স্বৈরাচারী সরকার পুলিশকে নিজেদের স্বার্থে ব্যাবহার করেছে। এতে পুলিশ বাহিনীর সুনাম কিছুটা নষ্ট হলেও, নিঃশেষ হয়ে যায়নি। আজ আপনাদের এ অবস্থার জন্য দায়ী কিছু অসাধু কর্মকর্তা। মনে রাখবেন, তারাই শুধু পুলিশ বাহিনীর সদস্য নয়। এখানে অনেক সৎ ও দেশপ্রেমিক কর্মকর্তা রয়েছেন। তাদের নেতৃত্বে একটি বৈষম্যহীন সমাজ গড়ে তুলুন।
এ আন্দোলনের জন্য প্রয়োজন হলে, পুলিশের সুনাম নষ্টকারী কর্মকর্তা বেনজির, আব্দুল্লাহ মিয়া, মামুন, মনিরুল, হারুন, বিপ্লব কুমার, প্রলয় কুমার সহ সকল দালালদের আইনের আওতায় আনুন।
আমরা জানি স্বৈরাচারের উপর ক্ষোভ আপনাদের উপর পরেছে। প্রায় সাড়ে চারশত থানা আক্রান্ত হয়েছে। এতে প্রায় হাজারের মত পুলিশ সদস্য শহীদ হয়েছে। তাঁদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। তবে রাষ্ট্র বিরোধী কর্মকাণ্ডে ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনী র’এর সদস্যরা জড়িত থাকতে পারে। তারা আপনাদের সাথেই থাকতে পারে। তাদের খুঁজে বের করুন, আইনের আওতায় আনুন।
বর্তমানে দেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীন হয়েছে। একটা স্বৈরাচার পালায়ন করছে। দেশটা নতুনভাবে গড়তে ১৫ কোটি মানুষের সমর্থনে একটি অর্ন্তবতীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহন করছে। এ সরকারের হাতকে শক্তিশালী করে দেশকে গঠন করতে পিছিয়ে পরবেন না। সরকার নিশ্চয়ই আপনাদের ন্যায় সংগত কথা শুনবে এবং আপনাদের ন্যায্য দাবী মনে নিবে।
মনে রাখবেন জীবনের ঝুকি নিয়েই আপনারা সরাজীবন কাজ করে গেছেন। এখনোও কিছু ঝুকি নিয়ে দেশের জনগনের জানমাল রক্ষা করতে হবে। আপনাদের অনুপস্থিতিতে পতিত স্বৈরাচারের দোসর এবং ভারতীয় সম্প্রসারণবাদীদের সহযোগী র’এর এজেন্টরা সারা দেশে খুন, ডাকাতির, লুটপাটের মহোৎসবে মেতে উঠেছে। জনগন সারা রাত জেগে থাকে পাহাড়া দিচ্ছে। এমন সময় মন অভিমান করে বসে থাকলে ভবিষ্যতে জনগনের কাছে কি ভাবে মুখ দেখাবেন? মনে রাখবেন, পুলিশ আর জনগন পরস্পরের বন্ধু। বন্ধুদের বাঁচাতে অবিলম্বে আপনাদের দায়িত্বে যোগ দিন। আমি বিশ্বাস করি ভবিষ্যতে সরকার এবং জনগন সহানুভূতিশীল হবে।
বৈষম্যমুক্ত সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে, পুলিশ এখন জনগনের পাশে, এই শ্লোগানকে সামনে রেখে আজই কাজে যোগদান করুন। আসুন নতুন উদ্যমে দেশকে গঠন করতে হাতে হাত রেখে এগিয়ে যাই।
আল্লাহ হাফেজ। বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।।