শিরোনাম :
নরসিংদী জেলা পরিষদের চেয়ানম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রদান জার্মান সফরে ইআরডি প্রতিনিধি দলকে রাষ্ট্রদূত মোশাররফ ভুঁইয়ার শুভেচ্ছা বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে কোল্ডস্টোরেজে ১৯ লাখ ডিম এসএসসি ফলাফলে নরসিংদীর এনকেএম হাইস্কুল দেশ সেরা নরসিংদীতে মাদ্রাসা প্রধানদের সাথে একাডেমিক কার্যক্রম উন্নয়ন বিষয়ক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত নরসিংদী ও পলাশ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী আনোয়ার এবং সৈয়দ জাবেদ জাতীয় গণমাধ্যম সপ্তাহের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবীতে স্মারকলিপি প্রদান নরসিংদীতে নগদের ছিনতাইকৃত টাকার আংশিক উদ্ধারসহ আটক ৩ নরসিংদীতে রিকশা চালকদের মাঝে জেলা বিএনপির পানি ও ছাতা বিতরণ কালের কণ্ঠ রায়পুরা প্রতিনিধি আব্দুল কাদিরের পিতৃ বিয়োগ
মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ১১:২৮ অপরাহ্ন

নরসিংদীতে তীব্র তাপদাহ ও বিদ্যুৎতের লুকোচুরিতে জনজীবন অতিষ্ঠ

স্টাফ রিপোর্টার / ৭৫ বার
আপডেট : সোমবার, ২২ এপ্রিল, ২০২৪

বৈশাখের আকাশে বৈশাখী ঝড় ও কালো মেঘ নেই। আছে শুধু সূর্যের চোখ রাঙ্গানি। ঝড় ও মেঘমুক্ত আকাশে বেড়েছে রোদের তীব্রতা। তীব্র তাপদাহের ফলে দুর্বিষহ গরমে মানুষ হাঁপিয়ে উঠছে। প্রকৃতির এমন আচরণে প্রান প্রায় ওষ্ঠাগত। সারাদেশের ন্যায় নরসিংদীতে ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা আর প্রচণ্ড গরমে জনজীবন একেবারে শেষ। আর সেই সময় বিদ্যুৎতের লুকোচুরিতে আরও অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জনজীবন। সকাল ৮টা থেকে তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত চলে তাপদাহ। আর দুপুর ১২টা হলেই যেন আকাশ থেকে আগুনের ফুলকী বইতে শুরু করে। তীব্র গরম ও তাপদাহ সহ্য করতে না পেরে গত ২দিনে নরসিংদীর সদর উপজেলার উত্তর সাটিরপাড়া ও মাধবদীতে মোঃ জসিম উদ্দিন (৫৫) ও ইবান (৩২) নামে দুইব্যক্তি হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বৈশাখের শুরুতে ঝড় ও বৃষ্টিপাত না হওয়ায় গরমের মাত্রা সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। নরসিংদীতে দাপড়িয়ে বেড়াচ্ছে ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে না কেউ। রাস্তা-ঘাট ও অফিস-আদালত ফাঁকা। প্রচন্ড রোদের তাপে রাস্তার পিচ গলে যাচ্ছে। রাস্তায় বের হলেই মনে হয় যেন আগুনের ফুলকি শরীরে লাগছে। তীব্র এই গরমে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ। বিপাকে পড়েছেন শিশু ও বৃদ্ধরা। একটু স্বস্তির আশায় অনেকেই গাছের ছায়াতলে বসে সময় কাটাচ্ছেন। তীব্র রোদে ও গরমে মানুষের প্রান প্রায় ওষ্ঠাগত ঠিক তেমনি সময়ে বিদ্যুৎতের লুকোচুরিতে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। যখন ইচ্ছে তখন বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। দীর্ঘ সময় ধরে বন্ধ থাকে বিদ্যুৎ। ফলে জেলাজুড়ে চলে লোডশেডিং। লোডশেডিংয়ের কারণে শিশু, রোগী ও বৃদ্ধরা বেশি কষ্ট ভোগ করছেন। পাশাপাশি চিকিৎসা সেবা ও কলকারখানার উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে।
পৌর শহরের বাসিন্দা সাদিক বলেন, একদিকে তীব্র তাপদাহে পুড়ছে দেশ। আর অন্যদিকে বিদ্যুৎতের আসা-যাওয়ায় আমরা মরতে বসেছি। গরম ও বিদ্যুৎ না থাকায় রাতে ঠিকমত ঘুমাতে পারছি না। নিজে অসুস্থ হয়ে পড়ছি। আশা করেছিলাম এই গরমে পল্লী বিদ্যুৎ একটু হলেও স্বস্তি দিবে। কিন্তু মরার উপর খাড়ার গা। ঘরে বাচ্চা ও অসুস্থ রোগী নিয়ে বিপদে আছি। বিদ্যুৎ কখন যায় আর কখন আসে কেউ বলতে পারে না। আমরা দ্রুত এর সমাধান চাই।
অধ্যাপক আল মামুন বলেন, বিদ্যুৎতের চাহিদা অনেক। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ছাড়া একটা দেশ কখনও উন্নত রাস্ট্রে পরিণত হতে পারে না। তাই বিদ্যুৎতের কোনো বিকল্প নাই। আর বিদ্যুৎ ব্যবহারে আমাদেরকে আরও মিতব্যয়ী হতে হবে। পাশাপাশি বিদুৎ উৎপাদন আরও বৃদ্ধি করতে হবে। লোডশেডিংয়ের বিষয় জানতে পল্লী বিদ্যুৎতের সহকারী প্রকৌশলী আইনল উদ্দিন বলেন, প্রচন্ড গরমের কারণে বিদ্যুৎতের চাহিদা দ্বিগুন বেড়ে গেছে। নিয়মিত বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই লোডশেডিং হচ্ছে। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি গ্রাহকদের নিরবিচ্ছিন্ন সেবা দিতে। লোডশেডিং কমিয়ে আনতে চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে অল্পসময়ের মধ্যে এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। ৮০ বছর বয়সী আঃ খালেক মিয়া বলেন, আমার জীবনে এমন রইদ আর গরম পড়তে দেহি নাই। গরমে অনেক কষ্ট হইতাছে। আল্লাহ জানে বাকি দিন কেমনে কাটবো। আল্লাহ তুমি আমাদের রক্ষা কর। রাজমিস্ত্রী শহিদ মিয়া বলেন, ঘরে ৩ ছেলে-মেয়ে ও বৃদ্ধ মা রেখে এসেছি। রোদের জন্য বসে থাকলে পেটে খাবার দিবে কে? আমরা রোদ-বৃষ্টি-ঝড় বুঝে না। কাজ আছে তো খাবার আছে। তাই কাজ করতে আসছি।বড়বাজারের দিনমজুর ইসলাম বলেন, গরমে জীবন যায় যায়। পেটের দায়ে আসছি কুলির কাজ করতে। ভ্যানচালক খালেক মিয়া বলেন, খুব বেশি গরম পড়ছে। এমন গরম জীবনেও দেহি নাই। রাস্তায় ভ্যান চালানো যাচ্ছে না। গরমে মাথা ও শরীর পুড়ে যাচ্ছে। শহরের বিভাটেক চালক জুয়েল বলেন, প্রচন্ড গরমে জামা কাপড় সব ভিজে যাচ্ছে। সকাল রোদ একটু কম থাকলেও দুপুর ১২টার পর রোদের তাপ বাড়ছে। বাইরে বের হওয়া যায় না। যাত্রীও পাওয়া যাচ্ছেনা। শহরের পার্শ্ববর্তী চিনিশপুর ইউনিয়নের কৃষক সিদ্দিক মিয়া বলেন, কয়েকদিনের গরমে ধান কাটতে পারছিনা। মাঠে যেতে পারছিনা। পাকা ধানগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রচন্ড গরমের কারণে জেলা সদর হাসপাতালে বেড়েছে ডায়রিয়া, জ্বরসহ তাপজনিত রোগীর সংখ্যা। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করাই বেশি হাসপাতালে আসছেন সেবা নিতে। এ ব্যাপারে সহকারী অধ্যাপক (মেডিসিন) ডা. মোস্তফা কামাল বলেন, বেশি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়া, ঠান্ডা ও ছায়াযুক্ত স্থানে আশ্রয় নেওয়া, বেশি করে পানি পান করা, বাসি-পচা খাবার পরিহার করা, দিনে অত্যন্ত ২ বার গোসল করা, সহজে হজম হয় এমন খাবার খাওয়া, বাইরে বের হলে অবশ্যই ছাতা ও মাথায় ক্যাপ ব্যবহার করা, সুতি ও ঢিলেঢালা কাপড় পরিধান করা। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের প্রতি নজর রাখা। আর অসুস্থ হলে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া।

Facebook Comments Box


এ জাতীয় আরো সংবাদ