শিরোনাম :
শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:৪২ পূর্বাহ্ন

পি.আর. পদ্ধতির নির্বাচন: জনগণের মতের প্রতিফলন নাকি দলীয় প্রভাবের প্রসার

এড.আহসান উল্লাহ / ২০৪ বার
আপডেট : শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২৫

বাংলাদেশে নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে নতুন নতুন চিন্তাভাবনা দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যে পি.আর. বা Proportional Representation (আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা তুলনামূলকভাবে বেশি। এই পদ্ধতিতে সরাসরি প্রার্থীকে নয়, বরং রাজনৈতিক দলকে ভোট দিতে হয়। ফলে জনগণের প্রত্যক্ষ পছন্দের প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ কমে যায় এবং দলীয় প্রভাব বৃদ্ধি পায়।
এই পদ্ধতিতে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলো তাদের প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে সংসদের আসন পায়। এরপর দলগুলো সেই আসনগুলোতে অপেক্ষাকৃত সিনিয়র ও গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সংরক্ষিত নারী আসনের মতোই সিলেকশন পদ্ধতিতে সংসদ সদস্য হিসেবে মনোনয়ন দিবে।
ফলস্বরূপ, ভোটাররা সরাসরি ব্যক্তিকে নয়, বরং দলকে ভোট দেয়, এতে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন দলের পছন্দের ব্যক্তি, জনগণের পছন্দের প্রার্থী নয়।
পি.আর. পদ্ধতিতে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা কোনো নির্দিষ্ট এলাকার নয়, বরং নিজ নিজ দলের প্রতিনিধিত্ব করেন।
ফলে জনগণ ও তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধির মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক কমে যায়।
এছাড়া একই এলাকায় (উপজেলা/থানা) একাধিক দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা বসবাসের কারণে একই অঞ্চল থেকে একাধিক সংসদ সদস্য মনোনীত হতে পারেন; আবার অনেক উপজেলা, থানা, এমনকি জেলা থেকেও একজনও মনোনীত নাও হতে পারেন।
যেমনটা সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে দেখা যায়।
সর্বশেষ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের ৫০ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে
ঢাকা জেলা থেকে নির্বাচিত হয়েছেন ১০ জন,
চট্টগ্রাম ও টাঙ্গাইল জেলা থেকে ৩ জন করে
এবং নরসিংদী, নোয়াখালী, খুলনা, লক্ষ্মীপুর, গোপালগঞ্জ ও ঠাকুরগাঁও জেলা থেকে ২ জন করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছে।
এতে বোঝা যায়, পি.আর পদ্ধতিতে জনগণের ভৌগোলিক প্রতিনিধিত্বে ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব হবে না।

পি.আর. পদ্ধতিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে।
উদাহরণস্বরূপ, বর্তমানে সারাদেশে মোট ভোটার প্রায় ১২,৬৩,০৭,৫০৪ (১২কোটি+) জন।
অন্যদিকে, ঝালকাঠি-১ আসনে মোট ভোটার ২,১২,০০০ (২ লক্ষ+)।
যদি আগামী জাতীয় নির্বাচনে ১০ কোটি ভোট কাস্ট হয় এবং ঝালকাঠি-১ আসনে ১০০% ভোট কাস্ট হয়, তবুও ঐ আসনের কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী সব ভোট পেলেও সংসদ সদস্য হতে পারবেন না।
কারণ, ৩০০ আসনের সংসদে একজন প্রার্থীকে নির্বাচিত হতে হলে সারাদেশের মোট কাস্ট ভোটের অন্তত ০.৩৩% ভোট পেতে হবে।
কিন্তু ঝালকাঠি -১ আসনের সব ভোট মিলে হয় ১০ কোটি কাস্টিং ভোটের মাত্র ০.২১২%
সব দিক বিবেচনা করলে দেখা যায়, পি.আর. পদ্ধতিতে জনগণের সরাসরি মতামতের পূর্ণ প্রতিফলন ঘটে না।
এ পদ্ধতিতে দলীয় প্রভাব বাড়ে, কিন্তু জনগণের এলাকার ভিত্তিক প্রতিনিধিত্ব কমে যায়।
ফলে সংসদ হয়তো দলের অনুপাতে ভারসাম্যপূর্ণ হলেও জনগণের প্রত্যক্ষ ইচ্ছার প্রতিফলন সঠিকভাবে ফুটে ওঠবে না।
লেখক : এডঃ আহসান উল্লাহ
এপিপি, জজকোর্ট, নরসিংদী

Facebook Comments Box


এ জাতীয় আরো সংবাদ