বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৫৩ অপরাহ্ন

‘দুর্যোগে-দুর্ভোগে ডা. আয়শা’

চেতনা ডেস্ক / ৯৬ বার
আপডেট : বুধবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ডা. আয়শা আক্তার। লোকমুখে তিনি কখনো মাদার তেরেসা, কখনো বা গরীবের ডাক্তার। ভালোবেসে মানুষ তাকে এসব উপাধি দিয়েছেন। এসব উপাধির পেছনে রয়েছে হাজারটি গল্প। যার সারাংশ করলে দাঁড়ায় ‘দুর্যোগে-দুর্ভোগে অসহায়ের পাশে এক অতন্দ্র প্রহরী’।
ডা. আয়শা ২২তম বিসিএস দিয়ে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায় কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর ২০০৭ সাল থেকে টানা ১৩ বছর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
২০১৯ সালে দেশে ডেঙ্গু ভয়াবহ সংক্রমণ ঘটলে, তিনি নিজ হাতে সারাদেশের রোগীর তথ্য সংগ্রহ, মেডিকেল টিম গঠন, ওষুধ সরবরাহ ও দেশের মানুষের কাছে স্বাস্থ্যবিষয়ক সঠিক তথ্য সরবরাহ করে প্রথম আলোচনায় আসেন। দ্বিতীয়বার, করোনা মহামারিতে তিনি মানুষের কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করেন।
করোনা ভাইরাস নিয়ে যখন মানুষের মধ্যে ভয়াবহ আতঙ্ক; তখন তিনি সাধারণ মানুষকে হাসপাতালের শয্যা, আইসিইউ ব্যবস্থা, অ্যাম্বুল্যান্স সেবা দিয়েছেন ক্লান্তিহীনভাবে। এই সময় সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সমাজকর্মীদের কাছে আদর্শ চিকিৎসক হিসেবে তিনি সুনাম অর্জন করেন।
তখন কন্ট্রোল রুমের মুখপাত্র হিসেবে তথ্য ব্যবস্থাপনা, কমিউনিটি মোবিলাইজেশন, গণযোগাযোগ, আইসোলেশনে, হোম কোয়ারেন্টিন, হাসপাতালের শয্যা, আইসিইউসহ অন্যান্য জরুরি সরঞ্জামের তথ্য দিয়ে মহামারি মোকাবিলায় সরকারকে সহযোগিতা করেন।
এছাড়া রানা প্লাজা, মহাসেন, ফণী, আইলা, আম্পান, বনানী চকবাজার আগুন, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটেও দিনরাত ব্যস্ত থাকতে হয় আয়েশাকে। কাজ করতে দেখা যায়, শুক্রবার-শনিবারও এমন কি ঈদের দিনও।
ডা. আয়শার জন্ম পাবনা শহরে। পৈতৃক নিবাস বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ। বাবা মো. মজিবর রহমান সরকারি চাকরিজীবি, মা শামসুন নাহার একজন গৃহিনী। তিন ভাই-বোনের মধ্যে ডা. আয়শা মেঝো। বড় ভাই পেশায় একজন ইঞ্জিনিয়ার ও ছোট ভাই একজন ব্যাংকার।
বাবা সরকারি চাকরিজীবি হওয়ায় ডা. আয়শার প্রাথমিক শিক্ষা জীবন কাটে পাবনা ও রাজশাহী জেলায়। এর পর ঢাকার মতিঝিল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন।
বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিএস ও তৎকালীন ইনস্টিটিউট অফ পোস্টগ্রাজুয়েট মেডিকেল রিসার্চ (আইপিজিএমআর) থেকে পোস্ট গ্রাজুয়েশন ট্রেনিং করেন। পরবর্তীতে ২২তম বিসিএস দিয়ে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন। বর্তমানে ঢাকার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট টিবি হাসপাতালে উপ-পরিচালক হিসেবে কর্মরত আছেন।
ডা. আয়শার বর্তমান কর্মস্থলে গেলে প্রায় দেখা মিলে সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের। সংবাদ কর্মীরা তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে সহযোগিতা পেতে ছুঁটে আসেন এখানে। এ সুযোগ থেকে বাদ যান না সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সমাজ কর্মীরাও।
ডা. আয়শার মনে করেন, দেশের বেশিরভাগ মানুষ ঋনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে চিকিৎসা করেন। অথচ চিকিৎসকরা সময় নিয়ে রোগী দেখেন না বা রোগীর কথা শুনতে আগ্রহ দেখান না। এ পরিস্থিতি দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার দুর্বলতা ও সাধারণ মানুষের প্রতি অবহেলা স্পষ্ট করে।
ডা. আয়শা স্বপ্ন দেখেন, এ দেশের সবচেয়ে দরিদ্র মানুষটিও একদিন অর্থের অভাবে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হবেন না। চিকিৎসা বৈষম্য কমবে জরুরি স্বাস্থ্যবীমা চালু করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
লেখক-উপ-পরিচালক, ২৫০ শয্যা টিবি হাসপাতাল

Facebook Comments Box


এ জাতীয় আরো সংবাদ