চেতনা ডেস্ক: একসময় শুধু বন্ধুদের সাথে সংযুক্ত থাকার একটি ব্যক্তিগত মাধ্যম ছিল ফেসবুক। আজ তা হয়ে উঠেছে তথ্যের এক উন্মুক্ত মহাসাগর। বর্তমান বাংলাদেশে এটি যেভাবে গণমাধ্যমে রূপ নিয়েছে, আসলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের এই গণমাধ্যমে রূপান্তর কতটা যৌক্তিক? রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের সঙ্গে কতটা সাংঘর্ষিক? এই প্লাটফর্মটির নির্মানের আসল উদ্দেশ্য কী ছিল?
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে যোগাযোগের একটি মাধ্যম হিসেবে ফেসবুকের যাত্রা শুরু হয়েছিল। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল একটি সামাজিক নেটওয়ার্ক তৈরি করা। যেখানে ব্যবহারকারীরা তাদের ব্যক্তিগত তথ্য ও ছবি শেয়ার করতে পারবেন। এটি কোনো গণমাধ্যম হিসেবে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়নি।
কিন্তু বাংলাদেশে কোটি কোটি ব্যবহারকারীর কাছে ফেসবুকই এখন সংবাদ সংগ্রহ ও প্রচার, জনমত গঠন ও প্রতিবাদের মূল প্ল্যাটফর্ম হয়ে দাঁড়িয়েছে আজ। তবে, সম্পাদকীয় নীতি এবং প্রাতিষ্ঠানিক দায়বদ্ধতার অভাবে এর এই ভূমিকা গভীর সংকট তৈরি করেছে। এই অনিয়ন্ত্রিত তথ্যপ্রবাহ রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থার সঙ্গে পরোক্ষভাবে সাংঘর্ষিক। এখানে যে কেউ একটি ফেসবুক পেজ খুলেই নিজেকে ‘সাংবাদিক’ পরিচয় দিচ্ছেন। যা বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও অবৈধ। এটি একদিকে যেমন পেশাদার সাংবাদিকদের জন্য বিব্রতকর, তেমনি বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে জনগণের মাঝে।
ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ নিজেও এই প্ল্যাটফর্মটিকে সংবাদপত্র ও টেলিকম সেবার মাঝামাঝি একটি ব্যবস্থা হিসেবে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু হিংসাত্মক বা বিভ্রান্তিকর কন্টেন্ট ছড়িয়ে পড়ায় প্রায়ই লঙ্ঘিত হচ্ছে মেটা’র নিজস্ব বিধি-বিধানও। এই প্লাটফর্মে গুজব, অশালীন ভাষা ও মানহানিকর তথ্য ছড়ানো সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩ অনুযায়ী একটি দণ্ডনীয় অপরাধ। যার জন্য জেল ও জরিমানার মতো কঠোর শাস্তির বিধান থাকলেও এক ধরনের উদাসীনতায় সংশ্লিস্টরা।
বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিস্থিতিতে সরকারের উচিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও সামাজিক মাধ্যমে সাংবাদিকতার পরিচয় ব্যবহারের ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট নীতিমালা তৈরি করা। একইসঙ্গে, সাইবার নিরাপত্তা আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে গুজব ও অপপ্রচারকারীদের আইনের আওতায় আনা জরুরি। ব্যবহারকারীদেরও কন্টেন্ট শেয়ারের আগে তার সত্যতা যাচাই করা অপরিহার্য। কারণ, একটি শক্তিশালী মাধ্যমের দায়িত্বশীল ব্যবহার নিশ্চিত করা সরকার ও সু-নাগরিকের সম্মিলিত দায়িত্ব। এই বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন না করলে অচিরেই ভেঙ্গে পড়তে পারে নতুন প্রজন্মের স্বাভাবিকতা বলে মনে করছেন সচেতনমহল ও বিশ্লেষকরা।