সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন অনলাইন পোর্টাল ও প্রিন্টিং গণমাধ্যমে নরসিংদী প্রেসক্লাবের ফ্যাসিবাদ কমিটির বিরুদ্ধে প্রকাশিত সংবাদ তোলপাড় সৃষ্টি করেছে জেলার গণমাধ্যম কর্মীদের মাঝে। আলোচনা – সমালোচনার ঝড় বইছে সুধীমহলে। জেলার সর্ব মহলে এখন টক অব দ্য টাউন নরসিংদী প্রেসক্লাব। টেন্ডার ও চাঁদাবাজী ছাড়াও বিভিন্ন সভা সেমিনার থেকে গণমাধ্যম কর্মীদের সম্মানী আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে সভাপতির বিরুদ্ধে। সভাপতি নিজের কর্তৃত্ব এবং স্বার্থ হাসিল করতে জেলার বিভিন্ন দপ্তরে গিয়ে দপ্তর প্রধানদের হুমকি প্রদান করার অভিযোগ রয়েছে।
এসব বিষয়ে নরসিংদী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোবারক হোসেন জানান, আমাকে ফ্যাসিবাদের দোসর বানাতে ৭১ টিভির প্রতিনিধি উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু আমি যে প্রায় ত্রিশ বছর যাবৎ দিনকাল পত্রিকার প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছি, এবং দিনকাল পত্রিকার প্রতিনিধি হওয়ায়, বিগত ১৬ বছর সরকার ও প্রশাসনের নিকট কতোটা চাপের মুখে ছিলাম, সেটাতো লিখে নাই। আমি প্রেসক্লাবের সদস্যদের ভোটে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর, ক্লাবের স্বার্থে এমপি মন্ত্রীদের কাছে যেতে হয়েছিলো বলে কি আজকে আমি ফ্যাসিবাদ হয়ে গেলাম?
পাঠকদের জন্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের অংশ তুলে ধরা হলো।
সংবাদে জানাযায়, ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তখনকার আমলে গঠিত জাতীয় প্রেসক্লাবসহ দেশের সকল প্রেসক্লাবের কমিটি বিলুপ্তি করা হয়।
অথচ এখনো পর্যন্ত বহাল তবিয়তে রয়েছে নরসিংদী প্রেসক্লাবের কমিটি। গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ছাত্র জনতার আন্দোলনের মুখে জাতীয় প্রেসক্লাবের কমিটিসহ দেশের সকল প্রেসক্লাবের কমিটি বিলুপ্তি করে জাতীয়তাবাদীমনা সাংবাদিকদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়।
অথচ ফ্যাসিবাদ সাংবাদিকদের দ্বারা গঠিত নরসিংদী প্রেসক্লাবের কমিটি এখনো পর্যন্ত বিলুপ্তি করা হয়নি।
গত ১৯.১১.২০২৩ইং তারিখে নরসিংদী সদর আসনের এমপি মো: নজরুল ইসলাম হিরু ও নরসিংদী জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মো: কামরুজ্জামান কামরুল এর প্রকাশ্য মদদে বাংলাদেশ টেলিভিশনের সাবেক নরসিংদী প্রতিনিধি বর্তমানে দৈনিক সমকাল এর প্রতিনিধি মো: নরুল ইসলামকে সভাপতি ও ৭১ টিভির নরসিংদী প্রতিনিধি মোবারক হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে ফ্যাসিবাদ পত্রিকার প্রতিনিধিদের নিয়ে ১১ সদস্য বিশিষ্ট নরসিংদী প্রেসক্লাবের কার্যনির্বাহী পরিষদ গঠন করা হয়।
এ কমিটি গঠন করার পর থেকে সভাপতি মো: নুরুল ইসলাম প্রতিনিয়ত বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে মোটা অংকের চাঁদা উত্তোলন করে কার্যনির্বাহী পরিষদকে না জানিয়ে নিজেরা আত্মসাৎ করেছেন।
সভাপতি নরসিংদীর সবগুলো সরকারি প্রতিষ্ঠানে গিয়ে নিজেদের ফায়দা লুটার জন্য দাবিয়ে বেড়াচ্ছেন।
বিশেষ করে নরসিংদীর মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের (বালু মহল) থেকে প্রতি মাসে ৬ লাখ টাকা উৎকোচ গ্রহণ করে তাদেরকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন কাজে সহযোগিতা করে আসছেন। ক্লাবের কোন সদস্য এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে তাকে ক্লাব থেকে বহিস্কার করার হুমকি দেয়া হচ্ছে। সদস্য পদ হারানোর ভয়ে কোন সাংবাদিক এ বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলছেন না।
বিগত কিছুদিন পূর্বে ক্লাবের কার্যনির্বাহী পরিষদের সম্মানিত যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মো: আকরাম হোসেন এর ফেইসবুক আইডি থেকে প্রেসক্লাবের ম্যাসেঞ্জার আইডিতে বালু মহাল থেকে চাঁদার টাকা আনার ঘটনাটি প্রকাশ করে।
প্রকাশ করে দেওয়ার পরও এ ব্যাপারে সভাপতির বিরুদ্ধে কেউ কোন প্রকার কথা বলার সাহস পায়নি।
কেউ কিছু বলতে গেলে বা বলার চেষ্টা করলে তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করাসহ ক্লাব থেকে বহিস্কারের হুমকি দেয়।
এব্যাপারে কথা বলতে গেলে বলির পাঠার স্বীকার হয়েছেন ক্লাবের কার্যনির্বাহী পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি দৈনিক ভোরের কাগজের নরসিংদী প্রতিনিধি বাদল কুমার সাহা।
তাকে এ পদ থেকে বহিস্কার করা হয় এবং তার স্ত্রী মিতালী সাহাকেও ক্লাবের সদস্য পদ থেকে বাতিল করা হয়।
উল্লেখ্য যে, মো: নুরুল ইসলাম প্রেসক্লাবের সভাপতি হওয়ার পূর্বে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় তার বাড়িটি নিলামে উঠে।
এ বিষয়ে আদালত থেকে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
কিন্তু নরসিংদী প্রেসক্লাবের সভাপতি হওয়ার পর তিনি আলাদ্দিনের চেরাগ হাতে পেয়ে যান।
অতি অল্প সময়ের মধ্যে তিনি ব্যাংক ঋণের অধিকাংশ টাকা পরিশোধ করে ফেলেন। অথচ সভাপতি হবার পূর্বে যেখানে তার নুন আনতে পান্তা ফুরাত, সেখানে তিনি এক বছরের মধ্যে কিভাবে এ ঋণের টাকা পরিশোধ করলেন।
তার কোন ব্যবসা বাণিজ্য নেই। বিষয়টি ক্লাবের সদস্যদের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ সরকার পতনের দীর্ঘ ৮ মাস অতিবাহিত হলেও নরসিংদী প্রেসক্লাবের কমিটি এখনো পর্যন্ত বিলুপ্তি হয়নি।
এব্যাপারে নরসিংদী জেলা প্রশাসক ও নরসিংদী প্রেসক্লাবের প্রধান উপদেষ্টা, নরসিংদী জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ এবং জেলা জামায়াত ইসলামির নেতৃবৃন্দের নিকট বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে।
নরসিংদী প্রেস ক্লাবের জাতীয়তাবাদীমনা সাংবাদিকদের আকুল আবেদন জরুরী ভিত্তিতে এ ফ্যাসিবাদ কমিটির বিলুপ্তি করে একটি নতুন কমিটি গঠন করা।