নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ডাংগা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাবের উল হাইয়ের অলিখিত দেহরক্ষী ও ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী ইব্রাহীম বাবুকে ছিনতাইকৃত প্রাইভেটকারসহ চাঁদাবাজী মামলায় আটক করেছে ঢাকার শাহবাগ থানা পুলিশ। সোমবার (২৫ মার্চ) রাতে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসি চত্তর এলাকা থেকে কাজী ইব্রাহীম বাবু ও তার দুই সহযোগীকে পিপু ও রাব্বী মিয়াকে গ্রেফতার করেন শাহবাগ থানার এসআই আলামিন। এসময় ছিনতাইকৃত প্রাইভেটকারসহ ছিনতাইকাজে ব্যবহৃত অপর আরেকটি প্রাইভেটকার জব্দ করা হয়েছে।
মামলা সূত্রে জানাযায়, রবিবার বিকেলে মামলার বাদী ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা রাশেদুর রহমান বিজয় নগর ইউসিবি ব্যাংক থেকে বের হয়ে প্রাইভেটকার নিয়ে মোহাম্মদপুর যাওয়ার সময় হাইকোর্ট মাজার গেটের বিপরীতে পৌছলে বাবু ও তার সহযোগীরা অপর আরেকটি প্রাইভেটকার দিয়ে পেছন থেকে সজোরে ধাক্কা মেরে গাড়ীর বাপ্পার ভেঙ্গে ফেলে। নামাজের সময় হলে বাদী হাইকোর্ট মসজিদে নামাজ পড়তে গেলে, বাবু ও তার সহযোগীরা বাদীর গাড়ীর ড্রাইভার মেহরাবসহ গাড়ীটি ছিনতাই করে নিয়ে যায়। গাড়ীতে বাদীর গুরুত্বপুর্ণ কাগজপত্র,নগদ দশ হাজার টাকা ও বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই ছিলো। এসময় বাদীর ড্রাইভার মেহরাবের ফোন দিয়ে, এক লক্ষ টাকা চাদা দাবী করেন বাবু ও তার সহযোগীরা। নইলে গাড়ী ও কাগজপত্র পাবেনা বলেও হুমকি প্রদান করেন। পরে বাদীর ড্রাইভার মেহরাবকে মারধর করে, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের মহসিন হলের সামনের রাস্তায় ফেলে দিয়ে গাড়ী নিয়ে অজ্ঞাত স্থানে চলে যায়। বাদী উপায়ন্তর না পেয়ে শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ৩৫ তারিখ ২৫ মার্চ। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে বাবু,পিপু ও রাব্বীকে গ্রেফতার করেন। এসময় ছিনতাইকৃত ও ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত দুটি প্রাইভেটকার উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত কাজী ইব্রাহীম বাবু নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ডাংগা ইউনিয়নের তালতলা গ্রামের কাজী আউয়ালের ছেলে এবং পিপু একই উপজেলার হাসনহাটা গ্রামের তাহের মিয়ার ছেলে ও রাব্বী মালিতা গ্রামের স্বপন মিয়ার ছেলে।
গ্রেফতারকৃতদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
এদিকে বাবু ও তার সহযোগীদের ঢাকায় গ্রেফতারের সংবাদে ডাংগা ইউনিয়নে সাধারণ মানুষের মাঝে চলছে আলোচনা সমালোচনার গুঞ্জন।
কেউ কেউ বলছেন, এসব ছিনতাই,চাঁদাবাজী ও ভুমি দস্যুতার অন্তরালে রয়েছে ইউপি চেয়ারম্যান সাবের উল হাই। ডাংগা ইউনিয়নের যে সকল অপরাধীরা ছিনতাই চাঁদাবাজী ও ভূমি দস্যুতা করছেন, তাদের সকলকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মদদ দিয়ে থাকেন ইউপি চেয়ারম্যান। আর সে কারনেই এলাকায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহস পায়না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি এই প্রতিবেদককে বলেন,ডাংগা ইউনিয়নের সকল অপকর্মের মুল ইন্ধন ও মদদ দাতা হচ্ছেন চেয়ারম্যান নিজে। সকল অপরাধীরা তার ছত্রছায়ায় থেকে অপরাধ করেও পার পেয়ে যায়। আমরা সাধারণ মানুষ কিছু করতে না পারলেও উপরওয়ালা একজন আছেন। তিনি ঠিকই একদিন বিচার করেন। বাবু হচ্ছেন চেয়ারম্যানের অলিখিত দেহরক্ষী। সারাক্ষণ চেয়াম্যানের বাড়ীতে থাকেন,চেয়ারম্যান যেখানে যায় বাবুও তার সাথেই থাকে। শুধু বাবু নয় কিছুদিন পুর্বে ছিনতাইয়ের ঘটনায় পলাশ থানায় গ্রেফতার হয়েছেন, চেয়ারম্যানের আরেক বিশ^স্ত প্রিয়ভাজন আবুল বাশার। নিরীহ কৃষকদের জমি জোরপুর্বক অবৈধভাবে দখল করে রেখেছেন ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি নাদিম। সেও চেয়ারম্যানের আস্তাভাজন। উপরের ছবিগুলোই তার প্রমাণ।
এলাকাবাসীর গুঞ্জন ও গ্রেফতারকৃতদের সাথে সম্পৃক্ততার বিষয়ে জানতে ইউপি চেয়ারম্যান সাবের উল হাই এর ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।