জার্মানির বার্লিনে যথাযোগ্য মর্যাদায় ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ পালিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ দূতাবাস, বার্লিনে যথাযোগ্য মর্যাদায় ও বিনম্র শ্রদ্ধায়, বাঙালি জাতির মুক্তিসংগ্রাম ও স্বাধীনতার ইতিহাসে অবিস্মরণীয় দিন, ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ পালন করেছে। জার্মানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোঃ মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, এনডিসি’র নেতৃত্বে দূতাবাসের সকল কর্মকর্তা, কর্মচারি ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের উপস্থিতিতে দূতাবাস প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দিবসের কর্মসূচীর সূচনা করা হয়। এরপর মান্যবর রাষ্ট্রদূত উপস্থিত সকলকে নিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ দিবস উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভার প্রথমেই মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয় এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর ০৭ মার্চ ১৯৭১-এ প্রদত্ত ঐতিহাসিক ভাষণের ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
ঐতিহাসিক ০৭ মার্চ উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় গুরুত্বপূর্ণ এই দিনের প্রেক্ষাপট ও তাৎপর্য আলোচনা করে মান্যবর রাষ্ট্রদূত মোঃ মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন যে, পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে প্রভাব বিস্তারকারী সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণসমূহের একটি হলো বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ। এই ভাষণ একটি জাতিকে পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙতে উদ্বুদ্ধ করে এবং জনমনে স্বাধীনতা ও মুক্তির স্পৃহা জাগ্রত করে। এটি শুধু বাংলাদেশের মানুষের জন্য নয়, সারা বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের অনুপ্রেরণা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণের মধ্যে পাকিস্থান সরকারের বৈষম্য, অত্যাচার, শোষণ এবং বাঙালির অধিকার আদায়ে আন্দোলনের বিষয় ও দিকনির্দেশনা অন্তর্ভুক্ত ছিল। বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে পাকিস্তানি শাসকদের ষড়যন্ত্রের মুখে বাংলার জনগণকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনের দিক নির্দেশনা প্রদান করেন। মান্যবর রাষ্ট্রদূত উল্লেখ করেন যে, মূলত বঙ্গবন্ধু তার এই ভাষণের মাধ্যমে পরোক্ষ ভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তিনি আরও বলেন যে, আজ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক এই ভাষণটি শুধু দেশের মধ্যে আলোচনায় সীমাবদ্ধ নয়, এ ভাষণটিকে ২০১৭ সালের ৩০শে অক্টোবরে ইউনেস্কো “ডকুমেন্টারি হেরিটেজ” তথা ‘বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন যে পৃথিবীর বিখ্যাত কোন ভাষণই ১০ লক্ষাধিক মানুষের সামনে এমন গঠনমূলক ও স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়নি। জাতির পিতার অতুলনীয় দেশপ্রেম, মানুষের প্রতি অপরিসীম মমত্ববোধ এবং অনন্য সাধারণ নেতৃত্বের গুণাবলীতে অনুপ্রাণিত হওয়ার পাশাপাশি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়নে উন্নয়নের অংশীদার হিসেবে ভূমিকা পালনের জন্য মান্যবর রাষ্ট্রদূত সকলের প্রতি অনুরোধ জানান। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে সভায় উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ যত দিন থাকবে, বাংলা ভাষা যত দিন থাকবে, বাঙালি যত দিন থাকবে, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা যত দিন প্রবাহিত থাকবে, বাঙালির হৃদয়ে আবেগ-অনুভূতি ও উত্তাপ যত দিন থাকবে, ততোদিন বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ প্রেরণার বাতিঘর হয়ে থাকবে এবং বঙ্গবন্ধুকে বাঙালির হৃদয়ে চিরদিন বাঁচিয়ে রাখবে।