মো: মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া একজন সাচ্চা অর্থনীতিবিদ। অর্থনীতি নিয়ে তার ক্ষুরধার লেখা, ইতিমধ্যে সমসাময়িক সময়ের অর্থনীতিবিদদের নজর কেড়েছে। আমার মনে হয়, করোনাকালীন সময় থেকে বর্তমান সময়কালে দেশের অর্থনৈতিক চালচিত্র নিয়ে বিভিন্ন সময়ে তাঁর লেখা এবং পরামর্শ প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্র গ্রহন করে শুধু দেশকে সমৃদ্ধই করেননি, বৈষয়িক অর্থনীতির মন্দা কাটিয়ে উঠতে জোড়ালো ভূমিকা রখেছে।
দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি নিয়ে তাঁর দূরদর্শিতা প্রকাশ পায়, যখন তিনি সেতু বিভাগের সচিব হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যোগাযোগ ব্যাবস্থার উন্নয়নই অর্থনৈতিক অগ্রগতি মূল চাবিকাঠি। তার তাই প্রধানমন্ত্রীর নির্দশনায় পদ্মা সতু, এলিভেটেড এক্সপ্রেস, মেট্রোরেল, কর্নফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে বঙ্গবন্ধু ট্যানেল সহ বিভিন্ন যুগান্তকারী প্রকল্প গ্রহণ করতে থাকেন। সময়ের পরিক্রমায় প্রকল্পগুলো আজ তা বাস্তব।
সেতু সচিব থেকে তিনি অর্থনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ এনবিআরের চেয়ারম্যান হিসেবে সফলভাবে দায়িত্ব পালন করে দেশের অর্থনৈতিক চালচিত্র আমুল পরিবর্তন ঘটান। এ সময় বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল মধ্যম আয়ের দেশে উন্নতি হয়। বিশ্বের অর্থনীতিবিদ এবং থিংক ট্যাংকরা এ অগ্রগতিকে ” ডেভেলপমেন্ট মিরাকল ” হিসেবে অভিহিত করে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার স্বপ্নসারথী ও রূপকার নরসিংদী সদর উপজেলার মহিষাশুড়া ইউনিয়নের বালুসাইর গ্রামের কৃতি সন্তান মো: মোশাররফ হোসেন ভূইয়া একজন স্বনামধন্য অর্থনীতিবিদ। তিনি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বৃত্তি নিয়ে ম্যাসাচুসেটস অংগরাজ্যের উইলিয়াম কলেজ থেকে উন্নয়ন অর্থনীতি বিষয় এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৯৮১ সালে বিসিএসের মাধ্যমে সরকারী চাকুরীতে যোগদান করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে ২০১৭ সালে সিনিয়র সচিব হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। পরে তিনি চুক্তিভিত্তিতে অভ্যন্তরিন সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও এনবিআরের চেয়ারম্যান হিসেবে সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে জার্মানীতে রাষ্ট্রদূত নিয়োগ পেয়ে বর্তমানেও কর্মরত আছেন।
বাংলাদেশের অর্থনৈতির গতি- প্রকৃতি বইয়ের লেখক দেশের মেগা প্রকল্পের অর্থনৈতিক তাৎপর্য, ইউক্রেন যুদ্ধ, অর্থ পাচার, আইএমএফের ঋন ও প্রাসঙ্গিক বিষয়, বিশ্ব মন্দার প্রেক্ষাপটে দেশের সম্ভাব্য দুর্ভিক্ষাবস্থা প্রতিরোধে করণীয়, শেখ হাসিনা : বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার স্বপ্নসারথী ও রূপকার লেখনীর মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির অবস্থাকে চমৎকার ভাবে পাঠকের সামনে ফুটিয়ে তুলেছেন। তাঁর লেখায় মূল্যস্ফীতি, ঋন খেলাপি, মানি লন্ডারিং, রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি, বানিজ্য ঘাটতি, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সংকট নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেছেন।
আমার মনে হয় আত্ম- সমালোচনার মাধ্যমে অর্থনীতির ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণে কি করনীয়, তার উপরই লেখক জোড় দিয়েছেন বেশি।
বইটির একটি অংশে লেখক, অর্থ পাচার বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য বিষফোঁড়ার সাথে তুলনা করেছেন। অর্থ পাচারের আগে তা প্রতিরোধে তিনি জোড় দিয়েছেন বেশি। কারন অপরাধীকে আদালতে দোষী সাব্যস্ত করে তা ফেরত আনা জটিল ও সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।
মুল কথা হলো লেখক মোশাররফ হোসেন ভূইয়া এই বইটির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি নিয়ে তার চিন্তা চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন।
এর আগে ২০২২ সালের বই মেলায় “বাংলাদেশের বদলে যাওয়া অর্থনীতির চালচিত্র” মোশাররফ হোসেন ভূইয়ার একটি বই প্রকাশ করে বিদ্যাপ্রকাশ। বইটি ব্যাপক পাঠক প্রিয়তা লাভ করে। এরই ধারাবাহিকতায় লেখক বর্তমানে চলমান একুশে বই মেলায় আলোচ্য বইটি প্রকাশ করতে অনুপ্রাণিত হন।