নিরাপদ রেল যাত্রায় যাত্রীদের ভোগান্তি ও হয়রানী রোধে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও বন্ধ হচ্ছেনা যাত্রী হয়রানী। রেলওয়ের ডিজিটাল প্রতারণায় ভোগান্তি ও হয়রানি দিনদিন বেড়েই চলেছে। রেলওয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কারনে টিকিট যার যাত্রা তার পদক্ষেপ যেন আরো গলার কাটা হয়ে উঠেছে। দালাল ছাড়া টিকিট মিলেনা, আবার সেই টিকিটে মাঝেমধ্যে চেকপোষ্টে আক্কেল সেলামী গুনতে হয় যাত্রীদের।
রেলওয়ে স্টেশনে টিকিট কাউন্টারে টিকিট মিলে না। টিকিট মিলে দালালদের কাছে, অতিরিক্ত টাকায়। হাজার হাজার রেলযাত্রী টিকিট না পেয়ে ফিরে যাওয়ার মুহূর্তে দালালরা পিছু নেয়। অতিরিক্ত (প্রায় দ্বিগুণ) টাকা দিলে তারাই তখন টিকিট ম্যানেজ করে দেয়। একটি দু’টি নয়। যে ক’টি টিকিট লাগবে আপনার, সব ক’টি টিকিটই আপনি পেয়ে যাবেন দালালদের কাছে। তবে অতিরিক্ত টাকার বিনিময়ে।
বেকার যুবক শ্রেণীর কিছু দালাল সারাদিন রেলওয়ে কাউন্টারের আশপাশে ঘোরাফেরা করেন, অথবা কোনো স্টলে বা চায়ের দোকানে বসে থাকেন। তাদের সংগ্রহে থাকে সব টিকিট। মাঝে মধ্যে প্রশাসনের নজরদারিতে কোনো কোনো দালালকে আইনের আওতায় আনা হলেও টিকিটের এই কালোবাজারি ঠেকানো যাচ্ছে না। রেলওয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্তাব্যক্তিদের তদারকির অভাবে বি বাড়ীয়া ও কিশোগঞ্জের একাধিক রেলওয়ে স্টেশনের এমন দশা যাত্রী সাধারণের ভীষণ বিরক্তি কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
বি বাড়ীয়া স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকাগামী মহানগর ট্রেন আসার দু ঘন্টা আগে কাউন্টারে টিকিট নেই, কাউন্টারের সামনেই কয়েকজন যুবক উচ্চস্বরে সিনেমা হলের টিকিট বিক্রির মতো হাকছে ঢাকা ঢাকা ঢাকা।
সরেজমিন গেলে এক যাত্রী চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ ফেলে বললেন, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের হয়রানি বন্ধে অনলাইনে টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা করেছে। এটা ভালো উদ্যোগ। কিন্তু এসব কি! দালালদের দৌরাত্ম্যে আমরা কি টিকিট কিনতে পারব না? তিনি আরো বলেন, কর্তৃপক্ষ টিকিটের সংখ্যা বাড়িয়ে দিলেই পারে। কাউন্টার থেকে পর্যাপ্ত টিকিট পাওয়া গেলে দালালরাতো কালোবাজারে টিকিট বিক্রি করতে পারত না। সরকার এই সহজ কথাটা কেনো বুঝতে পারে না।
কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার সরারচর রেলওয়ে টেনশনের যাত্রী সেবা নিম্নমানের হলেও যাত্রীর সংখ্যা অনেক বেশি। ফলে টিকিটের দৃষ্প্রাপ্যতার কারণে দালালদের কাছ থেকেই অতিরিক্ত টাকায় টিকিট সংগ্রহ করে নিতে হয়। বিশেষ করে ঢাকাগামী ট্রেনের ক্ষেত্রে যাত্রীদের হয়রানির শিকার হতে হয় বেশি। তবে, ভিওআইপি যারা অথবা জনপ্রতিনিধি যারা তাদের জন্য কাউন্টারে টিকিট ঠিকই থাকে। তাদের টিকিট পেতে কোনো অসুবিধা হয় না। অসুবিধা হয় শুধু সাধারণ যাত্রীদের। বাজিতপুরের যাত্রীদের পাশাপাশি নিকলীর যাত্রীরাও এই স্টেশন থেকে ট্রেন ভ্রমণ করে। এই বিষয়ে স্থানীয় রেল কর্তৃপক্ষের ভাষ্য হলো, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বহু আগে থেকেই টিকিট কালোবাজারির বিষয়টি কয়েক দফায় জানানো হয়েছে। কিন্তু যাত্রীদের দুর্ভোগের কমতি নেই।
বাজিতপুর উপজেলার সরারচর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার রতিশ বিশ্বাস বলেন, অনলাইনে টিকিট বিক্রির ফলে আমাদের কাউন্টারে নির্ধারিত পরিমাণের টিকিট যথাসময়ের আগেই শেষ হয়ে যায়। সাধারণ যাত্রীরা নির্দিষ্ট সময়ে টিকিট সংগ্রহের জন্যে এলেও সে ক্ষেত্রে আমাদের করার কিছুই থাকে না। অনেকে দালালদের কাছ থেকে বেশি টাকায় টিকিট কিনে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। তবে এ ধরনের ডিজিটাল প্রতারণায় তার কোনো হাত নেই।