কেচোঁ খুড়তে সাপ। মনে হয় এ যেন ভয়ংকর রূপকথার এক কল্পকাহিনী। নরসিংদী শহর ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদ রিগানকে গত ৩ অক্টোবর গ্রেফতার করে পুলিশ। এর পরই একে একে বেরিয়ে আসে এই রূপকথার মত কল্পকাহিনী। জানাযায়, নসির উদ্দিন রিগান মাত্র ৫/৬ বছরের ব্যাবধানে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে শহরের ব্যস্ততম ডিসি রোডে একে একে গড়ে তুলেছেন গ্যালাক্সি রেস্টুরেন্ট, গ্যালাক্সি পার্টি সেন্টার, স্কাই লাউঞ্জ, চুইঝাল নামক অভিজাত রেস্তোরাঁ। পাশাপাশি ২ কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে তুলেছেন খানদানী নামক বিলাসবহুল সেলুন। শুধু তাই নয় অরবিট নামে হেলিকপ্টার সার্ভিস সহ অন্যান্য সার্ভিস। খানদানী নামে আরও বিভিন্ন ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান। জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে তার এত টাকার উৎস কোথায়?
কে এই নাছির উদ্দিন রিগান? বাবা সাহাব উদ্দিন আহমেদ। হাজী আবুল হাসেম উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষক। চলতি বছরের ৫ মে অবসর গ্রহন করেন তিনি। পৈতৃক বাড়ি রায়পুরা উপজেলার নিলক্ষা ইউনিয়নে। চাকরির সুবাদে তিনি শ্বশুর বাড়ি পৌর শহরের পূর্ব ব্রাহ্মণ্দী এলাকায় সদ্য নির্মিত বিলাসবহুল তিনতলা বাড়িতে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন তিনি। ২ ছেলে ১ মেয়ে তার। ছোট ছেলে নাসির উদ্দিন আহমেদ রিগান (৩০)। সে ২০০৮ সালে স্থানীয় আইডিয়াল স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করেন। তারপর তিনি যোগদেন ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সাথে। বাগিয়ে নেন ছাত্রশিবিরের সভাপতি পদ। ২০১১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা আসার পর জামায়তকে ইসলামি জঙ্গি ও স্বাধীনতা ও যুদ্ধ অপরাধী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। এরপর থেকে জামায়াত-শিবিরের অনেক নেতাকর্মীরা গা ঢাকা দেন। এরমধ্যে শিবির নেতা নাসির উদ্দিন আহমেদ রিগানও একজন। বহুদিন পলাতক থাকার পর স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নামে বিভিন্ন কার্যক্রমের মধ্যে দিয়ে প্রকাশ্যে আসেন তিনি। হঠাৎ করেই শহরের প্রানকেন্দ্র ডিসি রোডে গড়ে তুলেন কয়েক শত কোটি টাকা ব্যয়ে ৪টি প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের মালিক রিগান ও জামায়াতের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকজন সদস্য বলে জানা যায়। এসব প্রতিষ্ঠান গুলোতে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন সময়ে নাম অস্তে ভূয়া সংগঠনের নাম দিয়ে চলে জামায়াতের গোপন বৈঠক এবং রেস্টুরেন্টের লাভের অধিকাংশ অর্থ জামায়াতের সাংগঠনিক কাজে ব্যয় করা হয়ে থাকে। সম্প্রতি নাসির উদ্দিন আহমেদ রিগান নাশকতার মামলায় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হলে বের হয়ে আসে থলের বিড়াল। এবিষয়ে জানতে গ্যালাক্সি রেস্টুরেন্ট এর ম্যানেজার মিঠু ও ইনচার্জ মহসিন জানান, ওনি মালিক মানুষ। আর আমরা কর্মচারী। কিভাবে বললো স্যার কার সাথে মিশে এবং কার সাথে যায়। এসব প্রতিষ্ঠানের মালিক রিগান স্যারের সাথে আরও কয়েকজন আছেন। তারা জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িত।
রিগানের মা বলেন, আমার ছেলেকে ষড়যন্ত্র করে পুলিশে দিয়েছে। আমার ছেলেকে ব্যবসার জন্য পরিবার থেকে কোন টাকা পয়াসা দিয়ে সহযোগিতা করা হয়নি। এতটাকা কিভাবে পেলেন জানতে? তিনি বলেন, আমার ছেলে বিভিন্ন লোকের সাথে চলাফেরা করে। সে কল্যাণেই তারা তাকে টাকা-পয়সা দিয়ে সহযোগিতা করেছে। তিনি এও স্বীকার করেন তার ছেলের সাথে জামায়াতের লোকজনের সাথে সম্পৃক্ততা রয়েছে।
রিগানের বাবা বলেন, আমি অতিসাধারণ একজন স্কুল শিক্ষক। ছেলের ব্যবসার সফলতার ঈষার্ণতি হয়ে তার বিরুদ্ধে একটি পক্ষ ষড়যন্ত্র করছে। সে ব্যবসা ভাল বুঝে বলে তাকে কিছু লোক টাকা-পয়সা দিয়ে তারা ব্যবসায়িক পার্টনার হয়েছে। তার মধ্যে জামায়াতের লোকও আছে বলেও তিনি স্বীকার করেন। এ বলে সে জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িত নয়। তিনি আরও বলেন, জামাতের লোকের সাথে পরিচয় এবং ব্যবসা-বাণিজ্য করলেই কি জামায়ত-শিবির হয়ে যায়?
নাশকতার অভিযোগে নরসিংদীতে জামায়াত-শিবিরের ৫ নেতাকে গ্রেপ্তার করেন নরসিংদী মডেল থানা পুলিশ। থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ২৯ জুলাই নরসিংদী মডেল থানায় নাশকতার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করা হয়। ইতিপূর্বেও এ মামলায় জামায়াত-শিবিরের বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই মামলায় সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে গত ৩ অক্টোবর (মঙ্গলবার) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) কে এম শহীদুল ইসলাম সোহাগ এর নেতৃত্বে নরসিংদী মডেল থানার একটি দল শহর ও শহরতলীর ভেলানগর, শালিধা, বাসাইল, গাবতলী, চিনিশপুর সহ বিভিন্ন স্হানে অভিযান চালিয়ে জামায়ত-শিবিরের ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেন। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, রায়পুরা উপজেলার হাইরমারা গ্রামের মোঃ শাহাজ উদ্দিনের ছেলে ও নরসিংদী শহর জামায়াতে ইসলামীর আমীর আজিজুর রহমান (৪৫), শহরের ব্রাহ্মণ্দী এলাকার সাহাব উদ্দিনের ছেলে ও ছাত্রশিবির শহর শাখার সাবেক সভাপতি নাসির আহমেদ রিগান (৩০), শালিধা এলাকার মৃত আঃ মান্নানের ছেলে ও জামায়াতের সদস্য আমজাদ হোসেন (৫২), পূর্ব ভেলানগর এলাকার মৃত আঃ অদুদ মিয়ার ছেলে ও জামায়াতের সদস্য মোস্তফা মিয়া (৪৭) এবং সদর উপজেলার সাহেপ্রতাব গ্রামের মোঃ বিল্লাল হোসেনের ছেলে ও জামায়াতের সদস্য হাবিব হাসান (৩৫)। পরে তাদেরকে ৫ দিনের পুলিশী জিজ্ঞেসাবাদের জন্য রিমান্ড চেয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়।
এদিকে বিভিন্ন সুত্রে জানা যায়, রিগানের বিভিন্ন অপকর্মে ও অনৈতিক কাজের পিছনে মদদ রয়েছে, নরসিংদীর কিছু ব্যাবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও তথাকথিত সুশীল সমাজের। এদের মুখোশ উম্মোচন করা হবে আগামী সংখ্যায়।
(চলবে)