নরসিংদীর শিবপুরে এক আইনজীবীর দাপট ও তার পরিবারের সদস্যদের অত্যাচারে পুরো গ্রামের লোকজন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। দাপুটে এই পরিবারের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে গ্রামবাসীরা একত্রিত হয়ে প্রতিবাদ সভা করেও কোন ফায়দা হচ্ছেনা। থানা ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েও তাদের নির্যাতনের শিকার হয়ে বিছানায় ডুকরে ডুকরে কাঁদছে অসহায় একটি পরিবার। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার বাঘাব ইউনিয়নের খড়কমারা গ্রামে। ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসী জানান, খড়কমারা গ্রামের সহজ সরল একটি পরিবার হচ্ছে আ: গণি মিয়ার পরিবার। তারা কখনো কারো আগেও নাই পিছনে ও নাই। গত ২৪ জুলাই বিকেলে গণি মিয়ার বড় ছেলে আব্দুল্লাহ বাড়ি নির্মাণ করার জন্য আপন চাচাতো ভাইয়ের সাথে জমি বিনিময় করার কথা বলছিলো। এসময় প্রতিবেশী সুনুমদ্দিনের ছেলে সিরাজুল এসে কথা কাটাকাটি শুরু করে দেন। আব্দুল্লাহ বলেন,কথা বলছি আমার ভাইয়ের সাথে তুই নাক গলানোর জন্য কে। কথা কাটাকাটির সময় আব্দুল্লাহ সিরাজুলকে একটি থাপ্পড় মারেন। রাতে আব্দুল্লাহর বাবা বাড়িতে এসে বিষয়টি শুনার পর, তার মেজ ছেলে আতিকুল্লাহকে সাথে নিয়ে সিরাজুলের বড় ভাই এডভোকেট সাইফুল ইসলাম এর কাছে গিয়ে তার ছেলের হয়ে দোষ স্বীকার করে ক্ষমা চান। এসময় সাইফুল ইসলাম হুংকার দিয়ে, আমার ভাইকে মারার বদলে মাইর হবে, ক্ষমা নয় বলেই তাদেরকে মারধর করে, হামলা চালায় চালায় আব্দুল্লাহর বাড়িতে। আব্দুল্লাহকে না পেয়ে তার বৃদ্ধা মা ও স্ত্রী সাহিদা বেগমকে মেরে গুরুতর জখম করে। পরে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে চাইলে, উকিল সাহেব লাঠি শোটাসহ তার লোকজন নিয়ে রাস্তায় ব্যারিকেট দিয়ে রাখেন। অবস্থা বেগতিক দেখে স্থানীয় মেম্বার চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগ করে পুলিশের সহযোগিতায় আহতদের হাসপাতালে নেওয়া হয়।
এব্যাপারে আব্দুল্লাহর পরিবার চেয়রাম্যানের নিকট বিচার বিচার চাইলে, উকিল সাইফুল তার ফুফাতো ভাই আনজত আলীকে দিয়ে মীমাংসার জন্য সময় ক্ষেপন করতে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় গত শনিবার (৫ আগষ্ট) বিকেলে আব্দুল্লাহ ও তার স্ত্রী সাহিদা বাড়ির সামনে কাজ করার সময় সিরাজুল ও তার দুই ভাই তাইজুল ও মমতাজউদ্দিন দেশীয় অস্ত্র লাঠি শোঠা নিয়ে হামলা চালায়। তারা আব্দুল্লাহ ও তার স্ত্রী সাহিদাকে পিটিয়ে গুরতর জখম করেন। পরে আশেপাশের লোকজন তাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান চিকিৎসার জন্য।
আহত আব্দুল্লাহ বলেন, তারা আমাকে জানে মেরে ফেলতে চেয়েছিলো, আমার মাথায় সাতটি সেলাই লেগেছে, আমার স্ত্রী সাহিদাকে পিটিয়ে হাড় মাংস এক করে ফেলেছে। সে এখন বিছানা থেকে উঠতে পারে না। আমি থানা ও চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। আমি সুষ্ঠ বিচার চাই। আহতের ভাই আতিকুল্লাহ বলেন, উকিলের দাপটে তার ভাইদের অত্যাচারে সারা এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। আমাদের পরিবারের উপর এই হামলার প্রতিবাদে গতকাল রবিবার (৬ আগষ্ট) সন্ধ্যায় গাঙপাড় বাজারে প্রতিবাদ সভা করেছে। প্রতিবাদ সভায় সকলে উকিল পরিবারের দাপট ও অত্যাচার থেকে রেহাই পেতে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেছেন। এ ব্যাপারে জানতে এডভোকেট সাইফুল ইসলাম এর মোবাইলে ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেন নি।
বাঘাব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদ হোসেন বলেন, খরকমারা গ্রামের আব্দুল্লাহ ও তার পরিবারের উপর হামলার বিষয়টি সত্যিই ন্যাক্কারজনক। ভুক্তভোগী পরিবার আমার কাছে অভিযোগ করার পর, উকিলের ফুফাতো ভাই গন্যমান্য ব্যক্তি, সে দায়িত্ব নিয়েছিলো মিমাংসা করে দিবে বলে। মিমাংসার কথা বলে পুনরায় হামলা অত্যান্ত দু:খজনক। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুরা গ্রাম ফুঁসে ওঠেছে। তারা একত্রিত হয়ে প্রতিবাদ সভা করেছে। যে কোন সময় বড় ধরনের দাঙ্গা বেধে যেতে পারে। আর তাই আমি পুনরায় অভিযোগ পেয়ে সাথে সাথে আগামী বুধবার আমার অফিসে হাজির হতে দু পক্ষকেই নোটিশ প্রদান করেছি। আমার ইউনিয়নে শান্তিপূর্ণ অবস্থা বজায় রাখতে আমি সর্বদা প্রস্তুত থাকি। কারন আমি নির্বাচনের আগে জনগণকে বলেছি, আমি নির্বাচিত হলে তারা ঘুমাবে, আমি পাহারা দিবো।
##