নরসিংদীতে ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে সাদেকুর রহমান ও আশরাফুল নামে ছাত্রদলের দুই নেতা নিহত হওয়ার ঘটনায় বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক খায়রুল কবির খোকন এবং তার সহধর্মিণী শিরিন সুলতানা সহ ৩০ জনের নামে নরসিংদী মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। উক্ত হত্যা মামলায় খায়রুল কবির খোকন গত ৫ জুন হাইকোর্ট থেকে ৬ সপ্তাহের আগাম জামিন নেন। হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী ৬ সপ্তাহের মধ্যে নিন্ম আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন। হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) বিএনপির নেতা খোকন আদালতে হাজির হবে এমন সংবাদে ছাত্রদলের পদবঞ্চিত কয়েকশত নেতাকর্মী কাফনের কাপড় পড়ে সকাল থেকে ডিসি রোড়ে জড়ো হয়ে বিভিন্ন শ্লোগান ও বিক্ষোভ করতে থাকেন। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বিক্ষোভকারীদের সংখ্যা আরও বাড়তে থাকে। পরে বিক্ষোভের ধরন সহিংসতায় রুপ নেয়।
ঢাকা থেকে আগত খোকনের আইনজীবীদের বহন করা দুইটি হাই এক্স গাড়ী ও একটি প্রাইভেটকার বিক্ষোভকারী ভাংচুর করে। এসময় গাড়ীর ভিতর থাকা তিনজন আইনজীবী গুরুত্বর আহত। তাদের তান্ডবে রাস্তায় গাড়ী চলাচল ও আশপাশের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। এসময় পথচারীরা আতংকে ছুটাছুটি করতে গিয়ে দুইজন পথচারী ও একজন সাংবাদিক গুরুত্বর আহত হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদেরকে রাস্তা থেকে হটানোর চেষ্টা করলে বিক্ষোভকারীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠে। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিছুটা পিছু হটলে তারা কয়েক ঘন্টা ডিসি রোড় অবরোধ করে রাখে। বেলা ২টায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তায় মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনের নেতৃত্বে বিএনপির নেতা খায়রুল কবির খোকন আদালতে আসেন। এসময় খোকনের অনুসারীরা তাদের নেতাকে এক নজর দেখার জন্য আদালত প্রাঙ্গনে ভিড় জমান। পরে আদালত হাইকোর্টের জামিনের আদেশ বহাল রাখেন।
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মঞ্জুর এলাহি বলেন, আমরা আশাবাদী ছিলাম আমাদের নেতা আদালতে আসবেন। সকল ষড়যন্ত্র বেধ করে তিনি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে আদালতে এসে উপস্থিত হয়েছেন। পথচারী খালেক বলেন, এমন পরিস্থিতি আর কখনও দেখিনি। দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষকে কষ্ট করতে হচ্ছে। কোর্টে জরুরি কাজ রয়েছে। যেতে পারছিনা। কয়েক ঘন্টা ধরে নিরাপদ স্থানে আটকা পড়ে রয়েছি। তারা দিনের আলোতে যেভাবে লাঠি-সোঁটা, দা-চাপাতি নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে তা দেখে মনে হয় দেশ থেকে আইনের শাসন ওঠে গেছে। স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা ভয়ে আতংকিত হয়ে পড়েছে। আইনজীবী মোঃ শাহনেওয়াজ হোসেন বলেন, ঢাকা হতে আগত আইনজীবীদের উপর হামলা আইনের পরিপন্থী। যারা এহেন কর্মকান্ড ঘটিয়েছে তাদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। উল্লেখ, চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি জেলা ছাত্রদলের পাঁচ সদস্যের আংশিক কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। ঘোষিত ওই কমিটিতে সিদ্দিকুর রহমানকে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ও মেহেদী হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ওই কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী ছিলেন মাইন উদ্দিন ভূঁইয়া। এরই সূত্র ধরে ছাত্রদলের প্রত্যাশিত পদ না পাওয়ায় পদবঞ্চিত নেতা মাইন উদ্দিন ভূঁইয়া ও তার অনুসারীরা খায়রুল কবির খোকনের গাড়ী বহরে হামলা, দফায় দফায় দলীয় কার্যালয় ভাংচুরের ঘটনা ঘটায়। পরে ২৫ মে (বৃহস্পতিবার) দুপুরে ছাত্রদল নেতা সাদেকুর রহমান ও মাইনুদ্দিনের নেতৃত্বে পদবঞ্চিত ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা পিকআপ ভ্যান ও ১০০ মোটরসাইকেল নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে চিনিশপুর বিএনপির কার্যালয়ের দিকে যাওয়ার সময় খায়রুল কবির খোকনের নির্দেশে সন্ত্রাসীরা মিছিলে ককটেল নিক্ষেপ করেন। তারা লাঠি ও ধারালো অস্ত্রদিয়ে হামলা করে অনেক নেতাকর্মীকে আহত করেন। ওই সময় সন্ত্রাসীরা সাদেকুর রহমানকে ঘেরাও করে খুব কাছ থেকে তার মাথায় গুলি করে। এ ঘটনায় আশরাফুল নামে আরো একজনকে গুলি করা হয়। পরে তাদের উদ্ধার করে প্রথমে জেলা হাসপাতাল ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সাদেকুর রহমান মারা যান। এর একদিন পর শুক্রবার সকালে অপর ছাত্রদল নেতা আশরাফুল মারা যান। এ ঘটনার প্রতিবাদে ৩১ মে খায়রুল কবির খোকনের চিনিশপুরের বাসভবন পদবঞ্চিত নেতারা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগ করেন বিএনপির নেতা খায়রুল কবির খোকন।