রায়পুরা উপজেলায় ঈদের দিন বাড়িতে ঢুকে মো. জুলহাস মিয়া (২৮) নামের এক যুবককে গুলি করে হত্যার ঘটনার মামলায় দুই জনকে গ্রেপ্তার করা হলেও বাকী আসামীরা পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে, প্রকাশ্যেই এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে তারা। প্রতিনিয়ত হুমকির মুখে নিহতের স্বজনেরা। এলাকাবাসী প্রকাশ্যে তাদের ঘোরাফেরা করতে দেখলেও পুলিশের কাছে তারা পলাতক। নিহতদের স্বজনেরা মনে করছেন পুলিশ আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার করলে জুলহাসকে হত্যার করার পরও এখন পরিবারের সদস্যদের হত্যার হুমকি সাহস আসামীরা পেতো না ।
জানাযায়, ঈদের দিন বিকেলে নিলক্ষার বীরগাঁও গ্রামে পরপর কিছু ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে উল্লাস করছিল একদল সন্ত্রাসী। এ সময় মুরগির খামারি জুলহাস মিয়াসহ স্থানীয়রা বাধা দেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সন্ত্রাসীরা দেশীয় অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে জুলহাসের বাড়িতে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। এ সময় জুলহাসসহ পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হন। তাঁদের উদ্ধার করে ১০০ শয্যা বিশিষ্ট নরসিংদী জেলা হাসপাতালে নেওয়ার পর জুলহাস মিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
পরে এ ঘটনার দুই দিন পর নিহত জুলহাসের মা হালিমা খাতুন বাদী হয়ে রায়পুরা থানায়, ১২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ২০/২৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার আসামীরা হলেন, জবা মেম্বার (৫০), সুমন (২৩), রাজিব (২১), এনামুল (২৩), জিহাদ (১৮), আরিফ (২১), জালাল (৩৫), সোহরাব (২৮), সোহাগ (১৮), ছোটন (২৫), শাহআলম (৩৫), সাজিদ (১৯)।
পরে এ মামলায় (২৬ এপ্রিল) বুধবার ভোরে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) নরসিংদীর রায়পুরা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুজনকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তাদের কাছে থেকে দুটি গুলিভর্তি একটি একনলা বন্দুকও উদ্ধার করা হয়। (২৬ এপ্রিল) সকাল ১১টায় পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) অনির্বাণ চৌধুরী। গ্রেপ্তারকৃত দুজন হলেন, রায়পুরার বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের বটতলীকান্দি এলাকার সুমন মিয়া (২৩) ও একই উপজেলার নিলক্ষা ইউনিয়নের দড়িগাঁও এলাকার রাকিব ব্যাপারী (২২)। ইতিমধ্যেই রাকিব জামিনে রয়েছে।
ঐ সময় সংবাদ সম্মেলনে এজাহারভুক্ত বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের একাধিক দল অভিযান চালাচ্ছে। তবে ঘটনার পর থেকেই তাঁরা পলাতক আছেন। যেখানেই তাঁরা পালান না কেন, দ্রুত তাঁরা গ্রেপ্তার হবেন এমনটাই জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অনির্বাণ চৌধুরী।
তবে হত্যাকা-ের প্রায় তিন মাস পেরুতে চললেও বাকী আসামীরা এখনও পর্যন্ত পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছেন। নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসীদের অভিযোগ আসামীদের ধরতে পুলিশ একদিন অভিযান করলেও পরবর্তীতে ঐ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেননি। এদিকে আসামী প্রকাশ্যে এলাকায় ঘোড়াফেরা করছে। এবং আসামীদের বিভিন্নভাবে হত্যার হুমকিতে নিহতদের পরিবারের সদস্যরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। এর মধ্যে হাইকোর্ট থেকে ৪ জন আসামী ৬ সপ্তাহের জামিনও নিয়েছেন।
নিলক্ষার হরিপুর,দড়িগাঁও, গোপীনাথপুর এলাকা এখন অপরাধীদের নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে পরিণত হয়েছে। বাঁশগাড়ি, নিলক্ষা ও মির্জারচর এলাকার মামলার আসামীরা এই গ্রাম গুলোতে অবস্থা করছে। আসামীদের তাদের নিরাপদ জুন হিসেবে মনে করছেন। কারণ এই এলাকায় আসামী ধরতে গিয়ে বেশ কয়েকবার ডিবি পুলিশ ও থানা পুলিশ হামলার শিকার হয়েছে। এই কারণেই থানা পুলিশ এসব এলাকায় অভিযান পরিচালনা করতে অনেকটাই ভীত থাকেন বলে মনে করছেন এলাকাবাসী। এই তিন গ্রামে অর্ধশতাধিক ৩শতাধিক ওয়ারেন্টের আসামীও রয়েছে। জুলহাস হত্যা মামলার আসামীদের ধরতে পারলেই নিলক্ষা ইউনিয়ন শান্ত হবে মনে করছেন এলাকার সচেতন মহল।
রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুর রহমান জানান, জুলহাস হত্যা মামলার আসামীদের গ্রেফতার করতে পুলিশী অভিযান অব্যাহত রয়েছে।