শিরোনাম :
নরসিংদীতে হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামী ওরফে শুটার কাদির গ্রেফতার ছাত্র আন্দোলনে আহতদের দেখতে হাসপাতালে আমরা বিএনপি পরিবার ভারত উল্টা পাল্টা কিছু করলে খেসারত ভারতকেই দিতে হবে : ইঞ্জি: বকুল নরসিংদী থেকে প্রকাশিত বহুল প্রচারিত ও পাঠকনন্দিত সাপ্তাহিক পত্রিকা আজকের চেতনা এর ৩৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত তালেব হোসেন মেমোরিয়াল একাডেমির ৭ম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন নরসিংদীতে এসএসসি ৯৪ বন্ধনের পরিচিতি ও মিলন মেলা অনুষ্ঠিত নরসিংদী জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মান্নান ও সম্পাদক নুরুন্নবী। নরসিংদীতে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও মুক্তির দাবীতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত নরসিংদীতে চাকুরি পুনর্বহাল ও কারাবন্দী বিডিআর সদস্যদের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত বাঁশগাড়ি উচ্চ বিদ্যালয় শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানী সহ অনিয়ম ও দূনীতির অভিযোগের সত্যতা মিলেছে
সোমবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৫৮ অপরাহ্ন

হাসপাতালে গায়েবি রোগী, খাবারের টাকা আত্মসাৎ

স্টাফ রিপোর্টার : / ৪২৩ বার
আপডেট : বুধবার, ২১ জুন, ২০২৩

রায়পুরা উপজেলায় প্রায় ৭ লাখ মানুষের বসবাস। আর এ ৭ লাখ মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে রয়েছে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট একটি মাত্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। সেখানে চলছে নানা অনিয়ম।
অতিরিক্ত রোগী ভর্তি দেখিয়ে অর্থ-আত্মসাৎ, দরপত্র বাছাইয়ে অনিয়ম, সেবা বন্ধ রেখে হাসপাতালে পিঠা উৎসব পালনসহ নানা অভিযোগ উঠেছে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. খান নূরউদ্দিন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে।
সরেজমিনে রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গিয়ে দেখা যায়, পুরুষ, মহিলা ও লেবার ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি রয়েছে মোট ২৬ জন। তবে সেখানকার দায়িত্বরত নার্সের কাছে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর রেজিস্ট্রার খাতা দেখতে চাইলে প্রথমে তিনি তা দেখাতে অস্বীকৃতি জানান। অনেক কথাবার্তার পর তিনি খাতাটি দেখাতে রাজি হন। সেখানে দেখা যায় ভর্তি রোগীর তুলনায় রেজিস্ট্রার খাতায় ১৪ জন রোগী অতিরিক্ত দেখিয়ে রোগীর সংখ্যা দেখানো হয়েছে ৪০ জন। পরে এ ব্যাপারে কর্মরত নার্সদের কাছে জানতে চাইলে তারা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
জানা যায়, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. আবু সাঈদ বদলির পর গত ২০২২ সালের ১৯ জানুয়ারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন ডা. খান নূরউদ্দিন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর। যোগদানের পর থেকে আজ পর্যন্ত তিনি শেষ কবে সঠিক সময়ে অফিসে এসেছেন তা হাসপাতালের কেউই জানে না। এছাড়া গত ৮ অক্টোবর ২০২২ তারিখে প্রকাশিত দরপত্রের মাধ্যমে আন্তঃবিভাগে ভর্তিকৃত রোগীদের খাদ্য ও পথ্য সরবরাহের লক্ষ্যে ঠিকাদার মনোনীত করা হয়। সেখানেও তিনি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে তার পছন্দের ঠিকাদারকে কার্যাদেশ পরিচালনা করতে নির্দেশ দিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। প্রতিদিন ঠিকাদারের সঙ্গে সমন্বয় করে আন্তঃবিভাগে ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা কখনো দিগুণ আবার কখনো তিনগুণ বাড়িয়ে এসব অতিরিক্ত অর্থ-আত্মসাৎ চলছে বলে জানা যায়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, রাত গভীর হলেই অতিরিক্ত রোগীর তালিকা প্রস্তুতির কাজ শুরু হয়। প্রতিদিন রোগীদের জন্য দুটি তালিকা তৈরি করা হয়। একটি খাবার তালিকা এবং আরেকটি বিল তৈরির তালিকা। প্রতিটি রোগীর জন্য প্রতিদিনের খাবার বরাদ্দ ১৭৫টাকা। তবে সেই টাকার খাবার রোগীরা পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে। নিন্মমানের খাবার ও অতিরিক্ত রোগী যোগ করে তৈরি করা হয় তালিকা। প্রতিদিন ভর্তি তালিকার চেয়ে বিল তৈরির তালিকায় ১০/১২/১৫ জন অতিরিক্ত দেখিয়ে মাসে ৫০/৭০ হাজার টাকা অতিরিক্ত হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এসব অনিয়মে দায়িত্বরত নার্স আপত্তি জানালে তাদেরকে অন্যত্র দায়িত্ব দিয়ে সেখান থেকে সরিয়ে দেন।
এসব অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে প্রতিবেদক বিগত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে হাসপাতালে রোগী ভর্তি ও রেজিস্ট্রার খাতায় রোগী অন্তর্ভুক্তির একটি তালিকা সংগ্রহ করে। তালিকায় দেখা যায় প্রতিদিন রোগী ভর্তির তুলনায় ১২/১৫ জন রোগী অতিরিক্ত অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে খাদ্য ও পথ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান আসফিক মেটালের মালিক নয়নের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি সরবরাহের দায়িত্ব স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মূলফটকে অবস্থিত এমদাদ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক শফিকুল ইসলাম শফিককে দিয়েছি।
খাদ্য ও পথ্য সরবরাহের দায়িত্বে থাকা শফিকুল ইসলাম শফিকের সঙ্গে কথা বললে বলেন, স্যার, আসার পর এখানে রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। তবে হাসপাতালের ২৬ জন রোগী ভর্তি থাকলেও ৩১ জন রোগীর নাস্তা কেন দেওয়া হলো এই প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো সদুত্তোর দিতে পারেনি।
এ বিষয়ে আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আর.এম.ও) ডা. মাসুদুজ্জামান বলেন, আমি সবেমাত্র এখানে জয়েন করেছি। তাই এসব বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না। তবে ঘটনা যদি সত্য হয়ে থাকে তাহলে সত্যিই দুঃখ্যজনক।
এ ব্যাপারে রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. খান নূরউদ্দিন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরের কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রথমে অতিরিক্ত রোগী ভর্তি দেখানোর বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান। পরে অতিরিক্ত রোগী দেখিয়ে অর্থ-উত্তোলনের কথা সত্যতা স্বীকার করে তিনি বলেন, আমাদের এখানে সরকারি বেতন বহির্ভূত আটজন কর্মচারী নিয়োজিত রয়েছেন। প্রতিমাসে তাদের পেছনে ৩০/৩৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়। আর এ টাকাগুলো আমাকেই ম্যানেজ করতে হয়। তাদের বেতনের টাকা সংগ্রহ করতে গিয়ে আমাকে এখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক, সেবিকা ও বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানিগুলোর দ্বারস্থ হতে হয়। এব্যাপারে ডিজি মহোদয়ের সাথে আলাপ করলে তিনি রোগীদের ডায়েট থেকে কিছু অতিরিক্ত টাকা সংগ্রহ করা যায় কিনা সে ব্যাপারে পরামর্শ দেন। তাই প্রতিদিন দুই চারজন অতিরিক্ত দেখানো হয়। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যেন না ঘটে সেদিকে খেয়াল রাখা হবে বলেও জানান তিনি।
নরসিংদী সিভিল সার্জন কর্মকর্তা ডা. মো. নুরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টের প্রতিবেদককে বলেন, হাসপাতালের পিঠা উৎসবের ব্যাপারে আমি শুনেছি, সেখানে ইউএনও মহোদয়ও ছিল। সকাল ৯টায় হাসপাতালের ২য় তালায় অল্প সময়ে প্রোগ্রামটি শেষ হয়ে গিয়েছিলো। এতে রোগীদের কোনো সমস্যা হয়নি। আর ঠিকাদারের বিষয়টা ভিন্ন, সেটা উনি ইচ্ছা করলেই করতে পারে না। আর রোগী বেশির বিষয়টা যেটা বলেছেন, সব সময় রোগী ৫০ জনের বেশিই থাকে। কীভাবে ১০/১৫ জন রোগী বেশি দেখাবে? যদি দেখিয়েও থাকে তাহলে এটার সুযোগ খুব কম। প্রতিটা উপজেলা কমপ্লেক্সে ওভার বার্ডেন, সব সময় রোগী ৫০ জনের জায়গায় ৬০-৭০ জনও থাকে। অনেক সময় দেখা যায় অনেক রোগী ভর্তি হয় কিন্তু বেডে থাকে না। এমন ২-১টা হয়। তারপরও আপনি যখন বলছেন আমি খোঁজ নেব। আপনি ছাড়াও বিষয়গুলো অনেকেই বলছে, আমি বিষয়টি দেখব।

Facebook Comments Box


এ জাতীয় আরো সংবাদ